দেবহাটা প্রতিনিধি:
দেবহাটায় দুই যুবলীগ নেতার নের্তৃত্বে চন্দ্রকান্ত সরদার (৬০) নামের এক নীরিহ সংখ্যালঘুর মৎস্য ঘেরের জমি জবরদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী চন্দ্রকান্ত সরদার উপজেলার টিকেট গ্রামের মৃত সাধুচরণ সরদারের ছেলে। সোমবার সকালে কুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রহিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ওই মৎস্যঘের জবরদখলে নের্তৃত্ব দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী চন্দ্রকান্ত সরদার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রঘুনাথপুর মৌজায় এসএ ৮৯ নং খতিয়ানের সাবেক ৬৪ ও বিএস ১০৩ দাগে ৩৬ বিঘা জমির মধ্যে ক্রয়কৃত ১৯ বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চন্দ্রকান্ত ও তার বন্ধু একই গ্রামের খগেন বাবু একটি মৎস্য ঘের করে আসছিলেন।
তাদের মৎস্যঘের থেকে কিছুটা দূরে একই দাগের মধ্যে আড়াই বিঘা সরকারি জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড ছিল। সরকারি জমিটি স্থানীয় যাদব বিশ^াসের ছেলে অরবিন্দু বিশ^াস একসময় ভোগদখল করতেন।
পরে তা টিকেট গ্রামের মাদার চন্দ্র মন্ডলের ছেলে অজয় কুমার মন্ডলের মৎস্য ঘেরে লীজ দেয় অরবিন্দু। প্রায় ৪ বছর আগে অজয়ের মৎস্য ঘেরের মধ্যে থাকা ওই সরকারি আড়াই বিঘা জমি একই গ্রামের মৃত সুধান্য মন্ডলের ছেলে রনজিৎ মন্ডলের কাছে বিক্রি করে স্বপরিবারে ভারতে পাড়ি জামান অরবিন্দু বিশস।
এরপর থেকে ক্রয়কৃত ওই সরকারি জমি বাবদ মৎস্য ঘের মালিক অজয়ের কাছ থেকে নিয়মিত লীজের টাকা নিতেন রনজিৎ। কিন্তু গেল দু’বছর ধরে অজয় মন্ডলের ঘেরের মধ্যে থাকা অবৈধভাবে খরিদকৃত তার সরকারি জমির স্থলে পাশ^বর্তী চন্দ্রকান্ত সরদারের মৎস্য ঘের থেকে অন্যের রেকর্ডিয় আড়াই বিঘা জমি জোরপূর্বক নিজের বলে দাবি করতে থাকে রনজিৎ।
এনিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার শালিসও হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী চন্দ্রকান্ত সরদার আদালতের শরণাপন্ন হলে বিজ্ঞ আদালত সেখানে ১৪৫ ধারা জারি করেন। সেই থেকে মনজিৎ মন্ডল জোরপূর্বক চন্দ্রকান্তের মৎস্য ঘেরের রেকর্ডিয় জমি দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এলাকাবাসি আরও জানায়, সম্প্রতি মৎস্য ঘেরটি সেঁচে মাছ আহরণের পর আগামী বছরের জন্য চাষোপযোগী করতে তা শুকিয়ে রেখেছে চন্দ্রকান্ত সরদার।
সেই সুযোগে সোমবার সকালে দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত অন্তত ৩০/৪০ জনের দলবল আকর্ষিক চন্দ্রকান্তের মৎস্য ঘেরের জমি জবরদখল শুরু করে রনজিৎ মন্ডল।
এসময় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রনজিৎ ও তার দলবলের দখলদারিত্বে নের্তৃত্ব দিচ্ছিলেন কুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের নব্য কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ হিমেল। এসময় গোলযোগ এড়াতে স্বশরীরের ঘটনাস্থলে বাঁধা দিতে না গিয়ে ভুক্তভোগী চন্দ্রকান্ত সরদার তার জাম জবরদখলের বিষয়টি মুঠোফোনে কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুল হককে অবহিত করে প্রতিকার চান। পরে ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুল হক ঘটনাস্থলে তার পরিষদের গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে যুবলীগ নেতাদের জবরদখলকান্ড সাময়িক স্থগিত করতে বললে তারা ঘটনাস্থল থেকে তড়িঘড়ি করে সঁটকে পড়ে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে জবরদখলে নের্তৃত্ব দেয়ার বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করেন যুবলীগ নেতা আব্দুর রহিম ও আব্দুল হামিদ। তবে অভিযোগ প্রমানিত হলে ওই দুই ইউনিয়ন যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলোক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় ঘোষ।
অপরদিকে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে জবরদখলের কাজ সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুল হক বলেন, আপাতত জবরদখলের কাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে দুপক্ষকে নিয়ে শালিসে বসবেন বলেও আশ^স্থ করেন তিনি।
দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, জবরদখল প্রচেষ্টার বিষয়টি মৌখিক অভিযোগে জেনেছি। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।