হোম অর্থ ও বাণিজ্য দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় এখনও ভেজালমুক্ত হয়নি দেশের বাজার

বাণিজ্য ডেস্ক:

আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়তে প্রতিটি নির্মাণই হতে হবে নিরাপদ। এ জন্য বাজারে ভেজাল পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে মানসম্মত উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দায়িত্বশীলরা দায় চাপানোর সংস্কৃতি থেকে বের না হলে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণের প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন হবে না।

কখনও প্রকৃতির বুক চিরে; কখনও বা প্রকৃতিকে বুকে ধারণ করে সভ্যতার মানচিত্রে গড়ে তোলা হচ্ছে আগামীর বিশ্বকে। টেকসই নির্মাণযজ্ঞে পৃথিবী হবে নিরাপদ, যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এইটি যেখানে প্রত্যাশা সেখানে বাজারে থাকা ভেজাল পণ্য নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে তারা জানান, দেশকে ও জাতিকে নিরাপদ রাখতে হলে, পণ্য অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। তাছাড়া আমরা ভবন, ব্রিজ, কালভার্ট যা-ই নির্মাণ করি না কেন, সেখানে যদি মানসম্মত নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করা হয়, তাহলে অবকাঠমো তো নিরাপদ হবে না। কাজেই অবকাঠামোর দিক দিয়ে হোক বা খাদ্যপণ্যের দিক দিয়ে হোক, যে কোনো দিকেই আমরা চাইবো সরকার যেন আমাদের নিরাপদ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করে।

ইট-কাঠ, রড-সিমেন্ট আর পাথরে- ভবিষ্যৎ নির্মাণের কোনো গল্পেই যেন দানা না বাঁধে আতঙ্ক। এজন্য বাজারে আসার আগেই মানহীন পণ্যের সরবরাহ ঠেকানোর তাগিদ সাধারণ মানুষের। এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, বাজারে কোনো একটি কোম্পানির পণ্য ছাড়ার আগে সরকারের শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে যে, পণ্যটি সর্বোচ্চ প্রোটোকলে উৎপাদিত কিনা; সেই সঙ্গে এটি সর্বোচ্চ ভেজালমুক্ত কিনা।

ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী বাজারে এলে কী হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাজোরা হিমালায়া ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা কেন বিভিন্ন ধরনের ভেজাল পণ্য বাজারে পাব? পণ্য ভেজালমুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে বিভিন্ন নমুনা আমাদের ল্যাবে পাঠাতে হয়। এতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। কাজেই এই সময় যদি কমিয়ে আনা যায়, তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব। কেননা, প্রকল্পের কাজ দেরিতে শেষ হলে ব্যয়ও বেড়ে যায়।

অন্যদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় এখনও মানসম্পন্ন পণ্যের সরবরাহে দেশের নির্মাণ সামগ্রীর বাজার নিরাপদ হতে পারেনি।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে, এই শহর অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। এটি দেখভাল করার অনেক সংস্থা রয়েছে, কিন্তু সবাই মনে করে আমার দায়িত্ব নেই, দায়ও নেই। যার কারণে পুরো দায়ই এসে পড়ে নাগরিকদের ওপর। কিন্তু নাগরিকদের সুবিধা দেয়ার মৌলিক এবং সার্বিক দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের।

তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বাজারে গিয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না যে আমরা টাকা দিয়েও নিরাপদ সামগ্রী পাচ্ছি কিনা। কাজেই যে কোনো পণ্য, সেটি নির্মাণ সামগ্রীর পণ্য হোক বা ইলেকট্রিক লাইনের পণ্য হোক, সেটি উচ্চ মানসম্পন্ন না হোক, অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

১৯৭০ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ অক্টোবর বিশ্ব মান দিবস পালন করা হয়। পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিতে বছরজুড়েই চালানো হয় ভেজালবিরোধী অভিযান-তৎপরতা। কিন্তু যুগের চাহিদা মেটাতে মানদণ্ডের মাপকাঠিতে দেশের বাজারে থাকা পণ্যগুলো মানসম্পন্ন হতে পেরেছে কতটা? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন