হোম আন্তর্জাতিক দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন কূটনীতির খেলোয়াড় ডোনাল্ড লুর চুপিসারে বিদায়

দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন কূটনীতির খেলোয়াড় ডোনাল্ড লুর চুপিসারে বিদায়

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 11 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম আলোচিত মুখ ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চলে গেছেন এই কূটনীতিক।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, ডোনাল্ড লুর মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে এবং তিনি পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড লু যেন অনেকটা নীরবে-নিভৃতে তার মেয়াদ শেষে দায়িত্ব পালন করে চলে গেছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, লু তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন এবং তাকে সরানো হয়নি।

ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল পরিচিত মুখ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে ও পরে ডোনাল্ড লু দুই দফায় বাংলাদেশ সফর করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘সরকার পতনের কারিগর’ হিসেবে পরিচিত এই মার্কিন কূটনীতিকের বাংলাদেশ সফরের পরপরই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ সফরে আসেন ডোনাল্ড লু। সে সময় লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বিবৃতিতে বলেছিল, ‘সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।’

ডোনাল্ড লুর সেই সফরের আগে, জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে বাংলাদেশে জাতীয় অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ২০২৩ সালে ২২ সেপ্টেম্বর। ওই নিষেধাজ্ঞা ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা হবেন, তাদের জন্য। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব-পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালে জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেছিলেন। তখন তার সফরের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন। পরে তিনি শর্তহীন সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেন। নির্বচনের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে প্রতিক্রিয়া জানায়। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করলেও সেটা আর খুব একটা ভালো হয়নি। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।

সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডোনাল্ড লু আবারও বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সেই সফরের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, ডোনাল্ড লু ঢাকায় মার্কিন সহায়তাকারী প্রতিনিধি হিসেবে গেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচনা ছিল যে, মার্কিন প্রভাবের কারণেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সরাসরি এ ধরনের অবস্থানকে অস্বীকার করেছে।

কেবল বাংলাদেশ নয়, ডোনাল্ড লু পাকিস্তানেও আলোচিত নাম। তার মেয়াদপূর্তি ও পদত্যাগ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দল পিটিআইয়ের কাছে বিজয় হিসেবে গৃহীত হতে পারে, আর সরকার এটিকে একটি রুটিন পরিবর্তন হিসেবে অভিহিত করতে পারে।

লুর সময়কালে পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খল ছিল। পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর আঁতাতে ইমরান খানের সরকারের পতনের পর থেকেই ডোনাল্ড লু দেশটির রাজনৈতিক আলোচনার বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছিলেন।

ডোনাল্ড লু ২০২১ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তত্ত্বাবধান ছিলেন। এর আগে, তিনি ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আলবেনিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মার্চ ২০২২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্র তার সরকার উৎখাতে ‘ষড়যন্ত্র’ প্রণয়ন করেছে অভিযোগ করেন। তিনি বিশেষভাবে লুর দিকে আঙুল তুলে বলেন, লু তার সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন এবং লু ও যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের তখনকার রাষ্ট্রদূত আসাদ মজীদ খানের মধ্যে এক আলোচনাকে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই আলোচনা ‘সাইফার’ কথোপকথন নামে পরিচিত। এটি ছিল একটি কূটনৈতিক তারবার্তা। এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে খানের বৃহত্তর বক্তব্যের কেন্দ্রীয় অংশ হয়ে ওঠে। খানের অভিযোগের পর, পিটিআই সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্রে লুর পদত্যাগের দাবি জানাতে শুরু করেন এবং তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পিটিআইর সমাবেশগুলোতে এই দাবি জোরালো হয়। এই বিষয়টি মার্কিন সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে নাকচ করেছে এবং সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে, তবে কিছু মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন সমস্ত ঊর্ধ্বতন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের অনুরোধ করেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন