হোম অন্যান্যসারাদেশ থমকে আছে নবগঙ্গা নদীর সেতু নির্মাণকাজ

অনলাইন ডেস্ক:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজের গতি নেই। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নদীর মাঝখানে ৯ নম্বর পিলারটি কার্গোর ধাক্কায় হেলে পড়ায় তা পুনঃস্থাপনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সেতু নির্মাণের নির্ধারিত সময়সীমা তিনবার বাড়ানো হয়েছে। তবু কাজ শেষ করা যায়নি।

জেলা শহর থেকে কালিয়া উপজেলার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। কিন্তু নবগঙ্গা নদী কালিয়া উপজেলাকে জেলা সদরসহ লোহাগড়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ফলে যাতায়াতে ব্যবহার করতে হয় ট্রলার। তাতে ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা, কখনো তারও বেশি।

স্থানীয়রা বলছেন, নবগঙ্গা নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় খেয়াঘাটে ওঠানামা করতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা ফায়ার সার্ভিসকেও চলাচলে হিমশিম খেতে হয়। বারইপাড়া ঘাটে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বল।

এসব বিবেচনাতেই কালিয়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বারইপাড়া-কালিয়া পৌরসভার পাচকাউনিয়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এই সেতু হলে নড়াইলের সঙ্গে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ অন্য জেলার যোগাযোগও সহজ হবে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতায় সেই সেতুটিই বাস্তব রূপ পাচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল অ্যান্ড মো. মঈনুদ্দীন বাশি জেভি ফার্মকে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। সেতুটি ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার লম্বা, ১০ দশমিক ২৫ মিটার চওড়ার এবং নদীতে ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যানের ওপর নির্মাণ করার কথা। এর ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতু নির্মাণের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন। সেই মেয়াদ তো বটেই, এরপর তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ।

এলাকাবাসী বলছেন, সেতুর নির্মাণকাজ এখন থেমে আছে। বালুভর্তি একটি কার্গোর ধাক্কায় সেতুর ৯ নম্বর পিলারটি হেলে পড়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর টেকনিক্যাল বিভাগের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু সেতুর কাজ আটকে আছে।

বারইপাড়া ঘাটের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগে সেতুর কাজ শুরু হলেও শেষ হবে কবে তা বলতে পারি না। নদীর ভেতরে নির্মিত একটি পিলার কার্গোর ধাক্কায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া জোয়ারের সময় পিলারের অবস্থান দেখতে না পারায় কয়েকটি কার্গো ওই পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। একবার একটি কার্গো ডুবেও গিয়েছিল।

জানতে চাইলে নড়াইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, ‘সেতু নিয়ে সংশয়ের কারণ নেই। নদীতে হেলে পড়া পিলারের স্থানে নকশা সংশোধনের জন্য আমাদের টিম কাজ করছে। সংশোধিত নকশা অনুযায়ী ৯ নম্বর পিলারের কাজ হবে। ভবিষ্যতে যেন কার্গোর ধাক্কায় পিলার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য আধুনিক ও সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকৌশলী বলেন, ‘সংশোধিত নকশায় ভিন্ন বাজেট থাকবে।’ এ পর্যন্ত সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়কের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’

নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হেলে পড়া পিলারটি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পিলারটি জায়গায় নকশা পরিবর্তন হবে। কিন্তু এখনো সেটি হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতু নির্মিত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী। তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি।

এই সংসদ সদস্য বলেন, নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এখন আওয়ামী লীগের প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই এই সেতু নির্মাণ হতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন