পপি গাইন :
গতরাতে এগারোটার দিকে ছোট বোন ফোন দিয়ে বললো বাবার হার্টের এনজিওগ্রামের রিপোর্ট দিয়েছে।রিপোর্ট বেশি ভালো না! শুনে বুঁকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠলো।যেন পৃথিবীর কোথাও আর আলো নেই।যেন আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছিনা।তীব্র এক যন্ত্রনা মুহূর্তে ঝড়ের মতো স্নায়ু-কোষে তোলপাড় শুরু করলো।বাবাকে আর দেখতে পাবোনা,কথা বলতে পারবোনা এটা ভাবা যায়!বাবাকে ছাড়া সেও কি জীবন?
খুব বলতে ইচ্ছে করছে-
“জানো বাবা,তোমার মতো কেউ ভালোবাসেনা!কেউ বোঝেনা আমি তোমার কতোটা আদরের। কেউ জানেনা কিসে আমার খুব কষ্ট হয়,কিসে ভালোলাগে;শুধু তুমি ছাড়া।তুমি ছাড়া আর কোনো বন্ধু নেই আমার।
তুমিতো জানো কতোটা ভালোবাসি তোমায়।
কেন তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছো এভাবে।তোমাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরতে যাবো। তুমি কিছুতেই আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেওনা প্লিজ!
মনে আছে তুমি গল্প বলতে,ছোটবেলায় তোমাকে ছাড়া একদম থাকতে পারতাম না আমি।দুদিন না দেখলে বাবা-বাবা করে কাঁদতাম।এখনো আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো বলো।এখনো তোমাকে ছাড়া কান্না পায়,ভীষণ-ভীষণ কান্না পায়!
প্রতিটি বন্ধুর মাঝে তোমায় খুঁজি।কিন্ত জানো কি,পৃথিবীতে হয়তো যেকোনো সম্পর্কের মতো সম্পর্ক হয়। ভাইয়ের মতো কেউ, বোনের মতো কেউ। কিন্ত বাবার মতো শুধু বাবাই হয়,আর কেউই হয়না।”
মাঝে-মাঝে মনে হয় বাবা কেমন হয়ে যাচ্ছে।আগের মতো ফোন দেয়না, কেমন দূরের মানুষ হয়ে যাচ্ছে।অথচ ভুলে যাই বাবার বয়স বাড়ছে।একদিন সবাইকে পৃথিবীর পথে হাটতে হয় একা, বাবার আঙ্গুল ছেড়ে।একবারও তা বুঝতে পারিনি।বুঝতে পারিনি আমি সত্যিই বড় হয়ে গেছি। আমরা বড় হওয়ার সাথে আমাদের অভিমান বাড়ে।কি পেলাম না পেলাম সে হিসাব, অভিযোগ বাড়ে।অথচ বাবা নামক মানুষটির কোন অভিযোগ নেই।নিঃশর্ত নিঃস্বার্থ দাতা।এক জীবনে যার ঋণ শোধ করার ক্ষমতা কখনোই আমাদের হবেনা।
একটি শব্দই আছে অদ্বিতীয়,
একটি মুখ আছে যার আর কারো সাথে তুলনা চলে না।
একটি মানুষ আছে যাকে ছাড়া নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হয়।
সে শুধু তুমিই বাবা।