ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সিরিয়া ও তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে হাজারো পরিবার প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে রাস্তায় দ্বিতীয় রাত কাটিয়েছে। দুদিন পরও বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে আটকেপড়াদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই দেশ মিলিয়ে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬০০ জনে। খবর রয়টার্সের।
তুরস্কের হাতায় প্রদেশের একটি হাসপাতালের বাইরে মাটিতে কয়েক ডজন মরদেহ, কম্বল ও চাদরে মুরিয়ে এবং আরও কয়েকটি মরদেহ ব্যাগে ভরে সারিবদ্ধ করে রাখতে দেখা গেছে। দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে অনেক মানুষকে গাড়িতে বা রাস্তায় কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছে। কারণ ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূকম্পনে কেঁপে ওঠা ভবনগুলোতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। ইতোমধ্যে ১৯৯৯ সালের পর থেকে তুরস্কের সবচেয়ে মারাত্মক এই ভূমিকম্পটি সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে আঘাত হেনেছিল।
তুরস্ক ও সিরিয়ার উদ্ধারকারীরা নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন। এ ছাড়া ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া কেউ কেউ জানান, তাদের কাছে এখনও মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্তাকিয়ার বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী মেলেক বলেন, ‘তাঁবু কোথায়, খাবারের ট্রাক কোথায়?’
কোনো উদ্ধারকারী দল দেখেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আগের দুর্যোগের সময়ের মতো এবার আমরা এখানে কোনো খাদ্য বিতরণ দেখিনি। আমরা ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেছি, কিন্তু আমরা এখানে ক্ষুধা বা ঠান্ডায় মারা যাবো।’
দুর্যোগের মাত্রা ক্রমশ আরও স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুরস্কে নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ১০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে ১১ বছরের যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার সরকার এবং বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ধারকারী দলের তথ্যমতে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৫০০ জন ছাড়িয়েছে।
তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে, তুরস্কের বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত শহরের বাসিন্দারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, তুরস্ক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ধীরগতির ও অপর্যাপ্ত।
তুরস্কে সোমবার ভোরে শুরু হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দফায় দফায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে হাসপাতাল, স্কুল এবং আবাসিক ভবনসহ কয়েক হাজার স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তুরস্ক ও সিরিয়ায় অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ।