হোম ঢাকামাদারীপুর তিন বছরেও নির্মাণ না হওয়া ড্রেন এখন মরণ ফাঁদ, পঙ্গু ২

তিন বছরেও নির্মাণ না হওয়া ড্রেন এখন মরণ ফাঁদ, পঙ্গু ২

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 58 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

তিন বছরেও ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ আরও দেড় বছর আগেই কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে পানি নিষ্কাশন থেকে শুরু করে চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই মাদারীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। নির্মাণাধীন ড্রেনের গর্তে পড়ে এরইমধ্যে আহত হয়েছে ১০ জনের বেশি। পঙ্গুও হয়েছেন দুইজন। তবে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌরবাসীর চলাচল ও দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণাধীন ড্রেন এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা আর হাঁটাচলায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

জানা যায়, লিগ্যাল এইড ট্রেনিং সেন্টার থেকে ভুঁইয়া বাড়ির মোড় পর্যন্ত ৫৫৬ মিটারের একটি ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় মাদারীপুর পৌরসভা। ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। এরইমধ্যে আংশিক কাজ করে ৫০ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়েছে ডিটি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ অসমাপ্ত থাকায় পানি নিষ্কাশন থেকে শুরু করে চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই বাসিন্দাদের। নির্মাণাধীন ড্রেনের গর্তে পড়ে এরইমধ্যে আহত হয়েছে ১০ জনের বেশি।

এলাকাবাসী জানায়, ড্রেন নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় দুর্ভোগে সৈয়দারবালী, পানিছত্র, মোবারকদি, কালিখোলা, কুলপদ্বী এলাকার চলাচলকারী কয়েক হাজার মানুষ। আধুনিক ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে কাজ অসমাপ্ত রেখে পালিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কবে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে ৫ নম্বর ওয়ার্ডবাসী সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেন নির্মাণের জন্য চলাচলের রাস্তাও বন্ধ হয়েছে। আর ময়লা ও পানি অপসারণ না হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই। বারবার তাগিদ দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নন পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে, কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিয়া আক্তার বলে, বৃষ্টিতে পানির কারণে আমাদের জামাকাপড়, বইখাতা ভিজে যায়। প্রায়ই চলাচলের সময় ড্রেনের নিচে পড়ে যাই। ঠিকঠাক স্কুলে যেতে পারি না।’

বাচ্চু খলিফা নামের একজন বলেন, ‘তিন বছর ধরে ড্রেনের কাজ অর্ধেক করে ফেলে রেখেছে। বর্ষার সময় পানি ড্রেনের উপরে দেড় থেকে দুই ফুট উঠে যায়, তখন ভোগান্তি আরও বাড়ে। আমরা বিপদে আছি।’

মুক্ত আক্তার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এ নির্মাণাধীন ড্রেনে প্রায়ই মানুষ পড়ে যাচ্ছে। আহতও হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন দ্রুত ড্রেনের কাজ শেষ করে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক।’

ড্রেন দিয়ে চলাচলকারী সলিম মাতুব্বর বলেন, ‘এটা ড্রেন নয়, মরণ ফাঁদ। ড্রেনের পড়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে দুইজন। তার এখন পঙ্গু। ঠিকঠাক হাঁটাচলা করতে পারে না। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।’

স্থানীয় বাসিন্দা শিলা বেগম বলেন, ‘নির্বাচন এলে কাউন্সিলর ও মেয়র বারবার আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসে। নির্বাচনের পরে কেউ খোঁজ রাখে না। ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা দুর্ভোগে আছি। এর প্রতিকার চাই।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিটি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আলহাজ নাজমুল হোসেন বাসু বলেন, ‘এলাকায় জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় ড্রেন নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। জমির ঝামেলা এরইমধ্যে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সমাধান করে দিয়েছে। এছাড়া ওই এলাকা ড্রেনের চারপাশে পানি থাকায় কাজ করতে অনেকটাই বিলম্বও হচ্ছে। আশা করি, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পুরো ড্রেন নির্মাণ করা হবে। তখন আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।’

মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম বলেন, ‘ড্রেনটি দ্রুত নির্মাণ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো উন্নয়ন কাজ পৌরসভা করতে পারে না। ড্রেন নির্মাণে কোনো গাফিলতি থাকলে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি আকারে দেয়া হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন