বিশেষ প্রতিনিধি :
মৎস্য ঘেরে মাছ চুরির অভিযোগে সাতক্ষীরার তালায় লূৎফর নিকারী (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ-ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও মৎস্য ঘের-মালিক সরদার মশিয়ার রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) সকালে জেয়ালানলতা নিকারীপাড়ার শত শত গ্রামবাসি মৎস্য ঘের মালিক সরদার মশিয়াররের বিচারের দাবীতে তালা উপ-শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে তালা থানা ঘেরাও করে গ্রামবাসি। এ সময় হাজার হাজার গ্রামবাসী ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’ ¯স্লোগান দিতে থাকেন।
মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) দিনগত রাতে তালা উপজেলার হাজরাকাটি-জেয়ালানলতা গ্রামের মধ্যবর্তী সরদার মশিয়ার রহমানের মালিকানাধীন নলবুনিয়া নামক মৎস্য ঘেরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শত শত গ্রামবাসি তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান নিয়ে পরে উপ-শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নিহত লুৎফর নিকারী (৬৫) তালা সদরের জেয়ালা নিকারীপাড়ার মৃত আইজুল নিকারীর ছেলে। আর আটক সরদার মশিয়ার রহমান তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং তালা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
নিহতের ভাতিজা জেয়ালা নলতা গ্রামের রুহুল আমিন নিকারী জানান, নলবুনিয়া বিলের সরকারি খালে মাছ ধরছিলেন লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারী। ওই খালের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানের মাছের ঘেরের ভেড়ী রয়েছে। খাল থেকে ধরে সেলিমকে আটকে রাখেন মশিয়ারের সহযোগী রনি। এরপর সরদার মশিয়ার ঘটনাস্থলে পৌঁছে বারুইহাটি গ্রামের রনিসহ তিনজন মিলে তাকে মারপিট করেন।
নিহতের স্ত্রী ছবিরন বিবি জানান, তার ছেলে সেলিম নিকারী রাতে এলাকার একটি এড়া খালে (সরকারী খাস) খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলো। সেখানে ছেলে সেলিমকে মারপিট করা হচ্ছে শুনে, তার স্বামী লৎফর নিকারী সেখানে যায়। এসময় স্বামী লূৎফর নিকারীকেও বেধড়ক মারপিট করেছে ভাইস-চেয়ারম্যানসহ ঘেরের কর্মচারীরা। একপর্যায়ে গ্রামবাসির সহায়তায় স্বামী লুৎফর নিকারী ও ছেলে সেলিম নিকারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে লুৎফর নিকারী মারা যায়।
এসময় ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেলিম নিকারীরর দুই কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। এ হত্যার বিচার চান ছবিরন বিবি।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার জানান, তাকে মৃত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে নিহতের শরীরের কোথায়ও আঘাতের চিহ্ন নেই।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরদার মশিয়ার রহমানকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
তবে আটক সরদার মশিয়ারের দাবী,ওই সময়ে তিনি ঘেরে ছিলেন না। তাদের মারপিটও করা হয়নি, লুৎফর নিকারী অসুস্থ্য ছিলেন।
এ ঘটনায় রাতেই পুলিশের জরুরি সেবা সার্ভিস ৯৯৯ এ ফোন দেয় স্থানীয়রা। তারপর রাতেই অভিযান চালিয়ে সরদার মশিয়ারকে আটক করে পুলিশ।