নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৪নং কুমিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাসজনিত দূর্যোগে মানবিক সহায়তা ত্রাণের কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য তালিকা প্রণয়ন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একজন পছন্দনীয় একজন তদারকী সরকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে কিভাবে এই মানবিক সাহায্যের তালিকায় ধন্যাঢ্য ও নিয়ম পরিপন্থী মানুষের নামের তালিকা এসেছে তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগীদের মাঝে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ২০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য যাদেরকে নির্বাচিত করা হবে তারা এর আগে অন্য কোন সহায়তা বা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় যদি থাকে তাদেরকে এ সহায়তা প্রদান করা যাবে না। ঐ চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য, জনসংখ্যা ও আয়তনের হার বিবেচনায় পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আজিজুল ইসলাম সরকারী নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছাখুশি মতো পছন্দের লোককে এ খাদ্য সহায়তার আওতায় এনেছেন। অভিযোগ উঠেছে কুমিরা ইউনিয়নের মোট ৫শ ৫০টি পরিবারের মাঝে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। তার মধ্যে ২শ পরিবারই সরকারের অন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকলেও তাদের নাম এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কুমিরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের উত্তম কুমার পাইন, পিতা- পরিতোষ পাইন, খাদ্য সহায়তার সিরিয়াল নং-৮৮৬ ব্যক্তিটির পাটকেলঘাটা বাজারে স্বর্ণের ব্যবসাসহ আলিশান বাড়ি থাকলেও তাকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই ভাবে একই ওয়ার্ডের শংকর বসু, পিতা অশ্বিন বসু, সিরিয়াল নং-২৫৯, সে প্রতিবন্ধী না হলেও তার নামে প্রতিবন্ধী কার্ড ও ১০ টাকা প্রাইজের কার্ড রয়েছে। একইভাবে অশ্বিন বসুর অন্য পুত্র অশোক বসু, যার সহায়তা সিরিয়াল নং- ২৬০, প্রতিবন্ধী কার্ডের সাথে ফেয়ারপ্রাইজের কার্ডও রয়েছে। তাকেও এই ২০ কেজি খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। অপরদিকে একই খানা সদস্যের পিতা-পুত্র মাসুদ রানা ও কুদ্দুস বিশ্বাসের নামে পৃথকভাবে এ সহায়তার তালিকায় আনা হয়েছে। যার সিরিয়াল নং- ২৬৩। একই ওয়ার্ডের বিশ্বনাথ দত্ত, পিতা অধীর দত্ত, খাদ্য সহায়তা নং- ৪৮৪ ও ২৬১ সিরিয়াল নম্বরে অজয় দত্ত ও পিতা বিশ্বনাথ দত্ত একইখানার সদস্য। তাদের আলিশান বাড়ি সহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও তাদেরকে এ খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। খাদ্য সহায়তার সিরিয়ালের ৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুর রহমান, পিতা শামছুর রহমান এর নামেও এই কার্ড প্রদান করা হয়েছে, যার সিরিয়াল নং- ৫৪১। এদিকে আমিনুর রহমানের স্ত্রী শিরিনা আমিনুরের নামে ফেয়ারপ্রাইজের কার্ড রয়েছে। একই পরিবারে আনিছুর, পিতা- শামছুর রহমান ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতির ভাইয়ের নামও এই খাদ্য সহায়তার তালিকায় আনা হয়েছে। ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুর রহমানের নিজের নাম, ভাইয়ের নাম এমনকি ছেলের নামেও এ খাদ্য সহায়তার কার্ড দেয়া হয়েছে। ছেলের নাম ইকরাম হোসেন, সিরিয়াল নং- ৫৩৬। আজ ১৪ মে এ প্রতিবেদন তৈরীর সময়ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, আনিছুরের নামে ভিজিডির কার্ড রয়েছে। যে কার্ড দিয়ে আজ সে চাল উত্তোলন করেছে। যার সিরিয়াল নং- ৫৩৭। জনসংখ্যা ব্যুরোর হিসাব মতে ঐ ইউনিয়নের আয়তন অনুযায়ী ১ থেকে ৯ নং ওয়ার্ডে মোট খাদ্য সহায়তার তালিকায় ব্যাপকভাবে অনিয়ম দূর্নীীত করে নয়ছয় করা হয়েছে। উল্লেখ্য ৯নং ওয়ার্ডে আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা প্রাপ্য কার্ড সংখ্যা হবে ৫৬, কিন্তু চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে ঐ ওয়ার্ডে ৯৭ জনকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এ খাদ্য সহায়তার আওতায় এনেছেন। এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিষদের ১২ সদস্য মিলে নামের তালিকা করা। ভুল ত্রুটি হতেই পারে। সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ তালিকা ইউপি মেম্বররা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এবিষয়ে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহরাব বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডের প্রকৃত প্রাপ্যদারদের না দিয়ে চেয়ারম্যান ইচ্ছাখুশী মতো তালিকা প্রণয়ন করেছেন। এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, কুমিরা ইউনিয়ন ছাড়াও এ ধরণের অনিয়ম অন্য ইউনিয়নেও হয়েছে। তবে কুমিরা ইউনিয়নে বেশি বলে অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্তপূর্বক সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে যারা এহেন কর্মকান্ড করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।