স্বাস্থ্য ডেস্ক :
দেশব্যাপী করোনা মহামারি আবারও ভীতিকর রূপ নিচ্ছে। তবে দেশের জেলা শহরগুলোর তুলনায় মহানগরগুলোর করোনা সংক্রমণের বেশির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে উদ্বেগজনক হারে। ধারণা করা হচ্ছে ঢাকায় দ্রুতই ভয়ংকর রূপ নিতে পারে করোনা।
করোনায় টানা ১৭ দিন কেউ মারা না গেলেও সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৭ জন। যা গত ১৪ সপ্তাহের সর্বোচ্চ। গত ৮ মার্চ এর বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল একদিনে, সেদিন ৪৪৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে ৩২৮ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা। এর বাইরে চট্টগ্রামে ১৬ জন, কক্সাবাজারে ৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ও বরিশালে ২ জন করে এবং গাজীপুর, চাঁদপুরে একজন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সব মিলিয়ে গত আট দিনে ১০৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হলো এবং তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৯ হাজার ১৩১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ২২৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৬ হাজার ২০০টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা আগের দিন ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ ছিল। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১১৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৬১৮ জন।
এরআগে ২ জুন ২২ জন, ৩ জুন ২৯ জন, ৪ জুন ৩১ জন, ৫ জুন ৩৪ জন, ৬ জুন ৪৩ জন, ৭ জুন ৫৪ জন, ৮ জুন ৫৮ জন, ৯ জুন ৫৯ জন, ১০ জুন ৬৪ জন, ১১ জুন ৭১ জন, ১২ জুন ১০৯ জন, ১৩ জুন ১২৮ জন, ১৪ জুন ১৬২ জন ও ১৫ জুন ২৩২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে শনাক্ত ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৪ জন, মার্চে ৮ হাজার, এপ্রিলে ১ হাজার ১১৪ জন এবং মে’তে ৮১৬ জন। আর জুন মাসের ১৫ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৪ জন।
হাসপাতাল পরিস্থিতি বলছে, ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩ হাজার ৯৪টি সাধারণ শয্যার মধ্যে বর্তমানে ৩ হাজার ৮০টি খালি আছে। আর ৩৫১টি আইসিউ’র মধ্যে ৩৪৩টি খালি। ৪১৩টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) মধ্যে ৪১০টি খালি আছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশ ও দেশের বাইরে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। তাই সবাইকে শিগগিরই টিকার বুস্টার ডোজ নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, যারা এখনো বুস্টার ডোজ নেননি, শিগগির নিয়ে নিন। কারণ করোনা কিছুটা হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে। আশপাশের দেশগুলোতেও সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যের কোনো বিষয় চাপিয়ে দেয়ার নয়। এটা স্বাধীন দেশ, সব নাগরিকের স্বাধীন চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাদের অবহিত করা। টিকা নিলে কী সুবিধা, না নিলে কী অসুবিধা- এ বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরছি। বাকি সিদ্ধান্ত যার যার, এখানে চাপিয়ে দেয়ার কিছু নেই। আমরা চাপিয়ে দিতেও পারব না।
বুস্টার ডোজ নিলে আপনি সুরক্ষিত থাকবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যারা নিয়েছেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তাই আমরা আহ্বান করব, যারা এখনও বুস্টার ডোজ নেননি, অতি শিগগির নিয়ে নিন।
দেশে করোনা সংক্রমণের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে এখনই বুস্টার ডোজ নেয়ার প্রকৃত সময় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।