বাণিজ্য ডেস্ক:
চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে পরবর্তী বোর্ড মিটিং হবে। ওইদিন মিলবে সংস্থাটির ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মলেনে এ তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, তার বেশিরভাগই পূরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে, সুদের হার বৃদ্ধি থেকে শুরু করে অন্যান্য শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংক পূরণ করেছে। কেবল রিজার্ভ এবং রাজস্ব সংশ্লিষ্ট শর্ত পূরণ হয়নি। তবে বাংলাদেশ ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পাবে।
মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, ‘অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক পলিসিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে, ডিসেম্বরের আগে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করলে এটি দ্রুত কমতে থাকবে। যারা পণ্য ধরে রেখেছে তারা ছেড়ে দিবে। এতে করে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।’
পলিসি রিফর্মের বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, ‘যখন যে রিফর্ম বা সংশোধন প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক করবে। বিশেষ করে, পলিসি এক্সচেঞ্জ রেট রিফর্মের থেকে বড় রিফর্ম আর নেই। নির্বাচনের জন্য আমরা বসে থাকিনি। যখন যে রিফর্মের প্রয়োজন হয়েছে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অর্থপাচার রোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক একযোগে কাজ করছে। কাজেই অর্থপাচার বন্ধে আইএমএফের শর্তের দরকার নেই। একটি দেশ হিসেবে আমরা নিজের জায়গা থেকেই এটি বন্ধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
আইএমএফ নতুন করে কোনো শর্ত দেয়নি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের দেয়া আগের শর্তগুলো পূরণে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই শর্ত মেনে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট চালু করা হয়েছে। কিছু শর্ত পূরণ করা সময়সাপেক্ষ। তবে সেক্ষেত্রেও কাজ চলছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভে ডলার রেখে বসে থেকে তো লাভ নাই। রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচ করা অব্যাহত থাকবে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে চাইলে রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচের কোনো বিকল্প নেই।’
খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বড় কোনো পদক্ষেপ নেই। এছাড়া ব্যাংকের মোট মুনাফার একটি অংশ খেলাপি ঋণ শোধে যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। আগামী বছর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ৩ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। তাদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মূলত আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত বাংলাদেশ কতটা পূরণ করতে পেরেছে এবং সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়।
আইএমএফের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে সংস্থাটির এ পর্যালোচনা মিশন বাংলাদেশে আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবে। দ্বিতীয় কিস্তি ঋণ ছাড়ের আগে শর্ত পরিপালন হচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনা করতেই আইএমএফের এবারের সফর।
নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্ত ছিল, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ থাকতে হবে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ সেপ্টেম্বরে ছিল ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার।