আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশে অস্থিতিশীলতা ও ‘জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ’ সৃষ্টি হতে পারে। শনিবার (২৯ মার্চ) ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন তিনি। এর আগে, দেশের কার্যত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, নির্বাচন ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।
নির্বাচিত নয় এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত আগস্ট থেকে ইউনূসের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার ১৭.৩ কোটি মানুষের দেশ-বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। এর আগে প্রাণঘাতী ছাত্র আন্দোলনের ফলে প্রধানমন্ত্রী (ভারতের মিত্র হিসেবে পরিচিত) শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল, হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি উভয়েই গত বছর নির্বাচন চেয়েছিল। তবে ইউনূস মঙ্গলবার এক ভাষণে বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেন ‘সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ আয়োজন করা যায় সেজন্যই এতো সময় লাগবে। বিরোধী দল ও কিছু পশ্চিমা দেশ আগের নির্বাচনে হাসিনার দলীয় কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল, যা হাসিনা অস্বীকার করেছেন।
এই মাসের শুরুতে ইউনূসের সাবেক মন্ত্রিসভার সহকর্মী এবং ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, এ বছর নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি।
কিন্তু বিএনপি এই বছরই গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য ও সাবেক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল মঈন খান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব যে, তাদের জন্য সেরা উপায় হল যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন ঘোষণা করা এবং সম্মানজনকভাবে বিদায় নেওয়া।
মঈন খান আরও বলেন, ডিসেম্বর সাধারণভাবে সম্মত সময়সূচি। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন আরও জটিলতা তৈরি করবে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। এর মানে কিছুটা অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে…..কি হবে তা সময় বলে দেবে।
তিনি প্রথম বিএনপি নেতা যিনি সরাসরি বলেছেন যে, নির্বাচন এই বছর না হলে তার পরিণতি ভালো হবে না। বিএনপির অন্যান্য সিনিয়র নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বা আত্মগোপনে আছেন।
বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলামের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (জাতীয় নাগরিক দল)। ছাত্রনেতারা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ দুটি পুরনো দল নিয়ে ক্লান্ত এবং পরিবর্তন চান।
তবে মঈন খান বলেছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ জরিপে দেখা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত যেকোনও নির্বাচনে দলটি সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান নির্বাচনের ঘোষণা হলে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারেক রহমান এবং তার মা- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক আদালতের রায় বাতিল করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সহজ করতে পারে।
লিভার সিরোসিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জানুয়ারি থেকে লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকার সময়ের চেয়ে তিনি এখন অনেক ভালো আছেন’। তবে তিনি আর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন না বলেও জানান মঈন খান।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির নির্বাচনে কোনও জোট গঠনের পরিকল্পনা নেই। তবে বিজয়ী হলে গণতন্ত্রের পক্ষে থাকা সব দলের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকবে, যার মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিও থাকতে পারে।
মঈন খান আরও ‘নির্বাচনের পর, যারা গণতন্ত্রের পক্ষে আমরা তাদের সঙ্গেও সরকার গঠন করতে আনন্দিত হবো।’
সূত্র: রয়টার্স