তপন চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালা ও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সীমানা দিয়ে প্রবাহিত পশ্চিম শালতা নদী খননে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নদীর ১৩ কিলোমিটার খননে চলছে লুটপাট। তবে খননের নামে লুটপাট হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন এসকেই (জেভি) নামের খুলনার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসি।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরশাফুল আলম বলেন, প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ৯৪ ভাগ শেষ হয়েছে। যেটুকু কাজ বাকি আছে, খুব দ্রæত শেষ হয়ে যাবে। শালতা খননের সময়ে নদীতে বাঁধ দেওয়ার কথা না থাকলেও ঠিকাদার ক্রসড্যামের বাঁধ দিয়ে নদী খনন করছে। ফলে বৃষ্টির পানিতে (মাগুরখালি ও খলিলনগর ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া পানি সরবরাহ না হওয়ায় নদী তীরের মৎস্য ঘের মালিকরা পড়েছে বিপাকে।
আবার নদীর খননকৃত মাটি দূরুত্ব না রেখে নদী তীরে রাখা হয়েছে। এজন্য সামান্য বৃষ্টিতে তীরে রাখা মাটি ধুয়ে খননকৃত স্থান ভরাট হচ্ছে। এছাড়া নদীর সাথে সংযোগ খালের কোনো সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। আর সংযোগ খালগুলোও খনন করা হয়নি। ফলে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, শালতা নদীর পশ্চিম শালতা নামে প্রকল্পের আওতায় ১৩ কিলোমিটার খননে ১৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাথে চুক্তিপত্র হয়। ২০১৯ সালের ২১ মার্চ থেকে কাজ শুরু করে ২০২০ সালের ২৫ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। নদীর খননকৃত স্থানে উপরে অংশে ৩২ মিটার (চওড়া), তলদেশ ১৫ মিটার , গভীরতা সাড়ে তিন মিটার কথা রয়েছে।
অথচ নিয়মের তোয়াক্কা না করে যেনতেন খনন কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। ক্রসড্যামের বাঁধ দিয়ে পানির মধ্যে নাম মাত্র খনন কাজ করা হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে এখনও খনন করা হয়নি। তবে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাগজে-কলমে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৯৪ ভাগ শেষ দেখিয়েছে। অথচ বাস্তবতায় তার কোনো মিল নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় খনন করে নদীর মাটি নদী তীরে রাখা হয়েছে। অনেক স্থানে খনন হয়নি। আবার অনেক স্থানে খনন হলেও নদীর একপাশ দিয়ে খনন করা হয়েছে। এলাকার মৎস্যজীবিরা পড়েছেন বিপাকে।
মাগুরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা জানান, নদী খননের সময়ে নদীর মধ্যে বাঁধ দেওয়ায় তার ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া নদী খননে ব্যপক অনিয়ম হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্টান তাদের ইচ্ছামত কাজ করে গেছেন। কাঠবুনিয়া গ্রামের শিক্ষক বিধাণ জোয়াদ্দার জানান, খনন করে নদী তীরের মাটি নদী তীরেই রাখা হয়েছে। যে মাটি সামান্য বৃষ্টি হলেই ধূয়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এমন বক্তব্য শালতা তীরের মানুষের। শালতা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুপদ মন্ডল জানান, নদী খননের নামে লুটপাট করা হচ্ছে। কোথাও নদীর একপাশে খনন করা হয়েছে। কোথায়ও খননই করা হয়নি।
তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, টিআএম না করলে নদী খনন করে লাভ হবে না। আজ খনন করলে কাল পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাবে। পলি ব্যবস্থাপনার জন্য খনন প্রকল্পের সাথে টিআরএম চালু করতে হবে। তালা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রনব ঘোষ বাবলু জানান, খননের নামে লুটপাট করার কারণে তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে মানবতার জীবন-যাপন করেছে। তখনও কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। খননে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি হলেও সংশ্লিষ্ট দপÍর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এসকেই (জেভি) এর মালিক শামিম আহম্মেদ বলেন, তিনি কাজে কোনো অনিয়ম করেননি। যদি খননে কোনো রকম অনিয়ম হয়, সেটা ঠিক করে দিবো। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তাদের কাজ চলমান আছে। যদি খননে কোনো রকম ত্রæটি হয়। তাহলে সংশোধন করে দেওয়া হবে।