হোম আন্তর্জাতিক ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর, একাধিক দেশের আমদানিতে প্রভাব ফেলবে

ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর, একাধিক দেশের আমদানিতে প্রভাব ফেলবে

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 27 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল ৪টা থেকে শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এ শুল্ক সংগ্রহ করা শুরুও করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

চুক্তির সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক আগে, ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, শুল্কের ফলে এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন,এই শুল্ক থেকে বার্ষিক রাজস্ব ৩০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারে।

আগে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প, যা ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করা পর্যন্ত এই শুল্ক চলবে।

ট্রাম্প আরও হুমকি দিয়েছেন, বিদেশে তৈরি কম্পিউটার চিপের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। কারণ তিনি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছেন। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাপল নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ক হারগুলো ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে কয়েক মাসের আলোচনার পর।

এর আগে, এপ্রিলের শুরুতে ঘোষিত উচ্চ শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর, অনেক দেশের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তিগত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

তবে এরপর থেকে ট্রাম্প বারবার তার শুল্ক পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছেন এবং কিছু দেশের ওপর অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করেছেন। যেমন: ব্রাজিল থেকে আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ, সুইজারল্যান্ড ৩৯ শতাংশ, কানাডা ৩৫ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দাবি, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অন্যায্য বাণিজ্যনীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। তবে কিছু কোম্পানি এবং শিল্পগোষ্ঠী সতর্ক করে বলেছে, নতুন এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসাগুলোর ক্ষতি করতে পারে। আর কিছু অর্থনীতিবিদ বলছেন,এটি মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল জাজিরার অ্যালান ফিশার জানান, ব্রাজিলের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কফি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে,কারণ আগেই আবহাওয়া-সম্পর্কিত ঘাটতির কারণে দাম বেড়ে গেছে।

ফিশার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি ব্রাজিল থেকে কফি সংগ্রহ করে,শুধু বড় চেইনগুলোই নয়, বরং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্বকারী আটটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ইতোমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। এদের জন্য ভিত্তিগত শুল্কহার নির্ধারিত হয়েছে ১৫ শতাংশ।

যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ হারে সম্মত হয়েছে, আর ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন ১৯ বা ২০ শতাংশ হারে শুল্ক সুবিধা পেয়েছে।

ট্রাম্পের আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনও পণ্য তৃতীয় কোনো দেশ থেকে উচ্চ শুল্ক এড়াতে আমদানি করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়,তবে তার ওপর অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে এর বাস্তবায়নের পদ্ধতি স্পষ্ট নয়।

বেকার ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর ট্যাক্স অ্যান্ড বাজেট পলিসির বিশ্লেষক জন ডায়মন্ড আল জাজিরাকে বলেন, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য পণ্যের বিকল্প সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে এবং সেইসাথে পণ্যের দামও বাড়াতে পারে।

তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিগুলো নতুন শুল্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উৎপাদনকেন্দ্রিক লাওস ও মিয়ানমারের ওপর সবচেয়ে বেশি, ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ট্রাম্প মূলত এমন দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছেন,যাদের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।

অবশ্য বৃহস্পতিবার এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো এই খবরকে শান্তভাবে গ্রহণ করেছে।

জাপান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও মূল ভূখণ্ড চীনের প্রধান শেয়ার সূচকগুলো কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে ভারতের ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারগুলো নিম্নমুখী ছিল।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিবিদ বার্ট হফম্যান বলেন, সাম্প্রতিক এই শুল্ক পরিকল্পনা কয়েক মাসের বিশৃঙ্খলার পর দেশগুলোকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন