শিপলু জামান, ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার লগডাউনের কারণে ফুল চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। যে কারণে ফুল চাষিরা এবার ফুল কেটে ক্ষেত থেকে ফেলে দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে ১৬ বিঘা জমিতে জারবেরা ও গোলাপের ফুলের চাষ করেছিলেন কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের টিপু সুলতান। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে সবথেকে বড় একজন ফুল চাষি।
করোনা ভাইরাস মহামারির প্রথম ধাক্কার ক্ষতি কাটিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ফুল চাষি টিপু সুলতান। কিন্তু বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন করোনার ঢেউয়ের কারনে। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে ফুল বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলার ফুল চাষিরা। স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে ফুল বিক্রি করতে না পারায় এ অঞ্চলের চাষি ও ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এতে ফুল বিক্রিতে ধস নামায় জেলার ফুল চাষিদের ব্যাপক লোকসান হয়েছে। ফুল বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরুও ছাগল দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে।
করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসার পর আবারো চাষিরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার স্বপ্ন নিয়ে ফুল বিক্রি শুরুও করেছিল। কিন্তু এবার করোনা ঢেউয়ের কারণে সরকারের বিধি নিষেধের কারণে ফুল চাষিদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতেও ফুল রাখতে পারছেন না। ফুলগাছ থেকে কেটে ক্ষেতের বাইরে ও গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে। আবার ক্ষেত থেকে তুলতে দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের মজুরি।
ঝিনাইদহ ৬ উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছিল। এরমধ্যে গাঁদা ১১৩ ও রজনী ২৪ হেক্টর বাকি জমিতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতি বছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। ২০২০ সালের মার্চে দেশের করোনার সংক্রমন ধরা পড়ার পর দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। ফলে ফুল বিক্রিতে ধ্বস নামায় জেলার ফুল চাষিদের ব্যপক লোকসান হয়েছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের টিপু সুলতান বলেন তিনি ১৬ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছিল, ৬ বিঘা জারবেরা, ৪ বিঘা থাই গোলাম, ৬ বিঘায় রয়েছে রজনিগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ। প্রতিদিন ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকার জারবেরা ফুল কেটে ফেলতে হচ্ছে, থাই গোলাম কেটে ফেলতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ও অন্যান্ন ফুল কাটতে হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার টাকার। তার ফুল ক্ষেতে প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে তাদের দিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
জুলাই মাস থেকে সারাদেশে চলছে সর্বাত্বক লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। ঘিঘাটি গ্রামের অনোয়ার হোসেন বলেন,লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতের ফুল তুলে একেবারেই বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না। যার কারণে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান হয় দেড় লক্ষ টাকার মত।
এবার আবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম কিন্তু আবারো করোনা আমাদের সব স্বপ্ন ধুলিষ্যৎ করে দিয়েছে। সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলাকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি লিটন হোসেন জানান, এবছর আমার দুই বিঘা জমিতে লাল ও হলুদ গোলাপের চাষ ছিল। এ ছাড়া প্রায় ৫ বিঘা জমিতে রয়েছে বিদেশী ফুল জারবেরা। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার গোলাপ ও দুই হাজার জারবেরা ফুল তুলতাম। প্রতিটি ফুল গড় ৫ টাকা করে বিক্রি হত। কিন্তু করোনার কারণে কোন বেচা বিক্রি নেই।
গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানালেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ফুল গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে।
ঝিনাইদহ ৬ উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছিল। এরমধ্যে গাঁদা ১১৩ ও রজনী ২৪ হেক্টর বাকি জমিতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতি বছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে।
বিশেষ করে দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না বাজারে।
সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে সাজানো হতো ফুল। পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা ও চট্রগ্রাম,বরিশাল, সিলেটসহদেশের বিভিন্ন স্থানে। মতো বড় শহরে ফুল ভর্তি করে ছুটে চলতো ট্রাক ও পিকআপভ্যান। সর্বাত্মক বিধি নিষেধে কারণে এখন সেটা হচ্ছে না। ফলে ফুল চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে ফুল।
চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে ছাগল ও গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন ও ফেলে দিচ্ছে। কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে বলেও জানান ফুল চাষিরা। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।