যশোর প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনও যুবলীগের ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা নেতৃত্বে সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। বিষয়টি সাব রেজিস্ট্রার ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাডার মোস্তাক আহম্মেদ শাকিল জানলেও তার সহযোগিদের রক্ষা করে চলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন সেবা গ্রহীতাদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে এই অফিসে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। সেবা পেতে গেলে দলিল লেখক সমিতির চাহিদা মোতাবেক অর্থ পরিশোধ করলে তবেই সেবা মেলে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই অফিসের অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা নেতৃত্বে একটি বিশাল সিন্ডিকেট গহড়ে উঠেছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে এ সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আদায় করে আসছে।
সূত্র জানায়, কল্যাণ তহবিলের নামে ঝিকরগাছা দলিল লেখক সমিতি দলিল প্রতি দুই হাজার টাকা আদায় করছে। যা গ্রাহকদের কাছে গোপন রেখে রেজিস্ট্রি খরচ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রায় দেড় হাজার দলিল ঝিকরগাছা অত্র অফিসে রেজিস্ট্রি হয়। সে হিসেবে প্রতিমাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। অফিস সহকারী মঞ্জুয়ারা নির্দেশে মহুরী জহুরুল হক ও নেছার আলী সিন্ডিকেট করে এই টাকা আদায় করছে বছরের পর বছর।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত ফ্যাস্টিট আওয়ামী সরকারের আমলে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত দলিল লেখক জহুরুল হক। মঞ্জুয়ারার নেক-নজরে থেকে বর্তমানেও এই সিন্ডিকেট পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তিনি।সূত্র জানায়, অফিসের নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশন দলিল প্রতি ২০০ টাকা আদায় করে। সে হিসেবে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ টাকা। এছাড়া দলিলের সার্টিফাইড কপি উত্তোলন বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় দেড় হাজার থেকে শুরু করে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। অথচ সরকারি ফিস মাত্র ৮ থেকে ৯শ’ টাকা। হিসেব মতে প্রতি মাসে এক হাজারটি দলিলের বিপরীতে অন্তত; ২০ লাখ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে সিন্ডিকেট। আওয়ামী যুবলীগের পরিচয়ে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছে সাদ আমিন রনি-সাহাজুল ইসলাম দীপু-সন্টু।
অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট পড়চা, ওয়ারেশ কায়েম সার্টিফিকেট ও দানপত্র দলিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলিল প্রতি ২ হাজার থেকে শুরু ২ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। মাস শেষে যার পরিমাণ দাড়ায় ৫০ লাখ টাকা। আদায়কৃত এসব টাকার একটা অংশ পান আওয়ামী দোসর সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহম্মেদ শাকিল।সূত্র জানায়, এই সকল সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ও মাস্টার মাইন্ড জুম্মান হোসেন সোহেল নকলনবিশ হওয়া সত্বেও তার জন্য অফিসের ভেতরে আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাম ক্যাশিয়ার জহুরুল হক বলেন, আমরা শুধুমাত্র আমাদের পারিশ্রমিকের টাকা নিই। যে টাকা মাস শেষে সকল নিবন্ধনধারী দলিল লেখকের মধ্যে বন্টন করে থাকি। আর যে সকল টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আকবার আলী বলেন, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তিন মাস। এ ধরণের কোনো টাকা লেনদেনের খবর আমার জানা নেই।বিগত আওয়ামী লীগের আমলের আশীর্বাদপুষ্ঠ জহুরুল হককে স্বপদে বহাল রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, তার নামে এর আগেও এরকম অভিযোগ উঠেছে। তাকে শুধরে দেওয়ার জন্য এই পদে রাখা হয়েছে এবং এই মাসটা দেখা হবে। সমিতির সদস্যদের জন্য দলিল প্রতি টাকা নেওয়া হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।অভিযোগের ব্যাপারে মঞ্জুয়ারার কাছে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে অবৈধভাবে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে ঝিকরগাছার খন্ডকালিন ও মনিরামপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহম্মেদ শাকিল জানান, আমি সপ্তাহে একদিন ঝিকরগাছা অফিসে দায়িত্ব পালন করি। এরকম কোনো সংবাদ আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।