স্পোর্টস ডেস্ক:
যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুলের উদ্বোধনী জুটির দিকে ছিল সকলের নজর। পার্থে ওপেনিং জুটিতে সর্বাধিক রান তোলার রেকর্ড তারা আগেই গড়ে বসেছিলেন। এবার তারা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের হয়ে রেকর্ড ওপেনিং জুটি গড়লেন। দেড় শতাধিক রানের ইনিংস খেলে গড়লেন একের পর এক কীর্তি। রান খরা কাটিয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৮০তম শতকের দেখা পেলেন বিরাট কোহলি। শেষ বিকেলে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। বিশাল জয়ে সিরিজ শুরুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে ভারত।
সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানের জবাবে অজিরা মাত্র ১০৪ রানে গুটিয়ে যায়। ৪৬ রানে এগিয়ে থেকে ভারত ৬ উইকেটে ৪৮৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। ৫৩৪ রানের পাহাড়সোম জয়ের লক্ষ্যে নেমে ১২ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
রোববার তৃতীয় দিনের সকালে বিনা উইকেটে ১৭২ রান নিয়ে টিম ইন্ডিয়া দিনের খেলা আরম্ব করে। গাভাস্কার-শ্রীকান্ত জুটি ১৯৮৬ সালে সিডনিতে ১৯১ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের হয়ে ওপেনিংয়ের সেই রেকর্ড ভেঙে ২০১ রানের জুটি গড়েন জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল।
উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভসবন্দি হয়ে ৭৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলা রাহুল ফেরেন। খানিক পর ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন জয়সওয়াল। ২০০১ সালের পর এখন পর্যন্ত তিনজন বিদেশি অস্ট্রেলিয়ায় ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছেন। ২০০৩ সালে অ্যাডিলেডে রাহুল দ্রাবিড়, ২০০৯ সালে ওয়াকায় ক্রিস গেইল।
দেবদূত পাডিক্কালকে (২৫) নিয়ে জয়সওয়াল দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়েন। এরপর দেড় শতাধিক রানের ইনিংস খেলে তিনি কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের পাশে নিজের নাম লেখান। ২২ বছর ৩৩২ দিন বয়সে টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ১৫০+ রানের ইনিংস খেললেন যশস্বী জয়সোয়াল। বয়স ২৩ হওয়ার আগে ৪ বার দেড়শ ছুঁয়ে শচীন টেন্ডুলকারের পাশে বসলেন তিনি। একই কীর্তি আছে গ্রায়েম স্মিথ আর জাভেদ মিয়াঁদাদেরও। ২৩ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে সবচেয়ে বেশি ৫ বার ১৫০ স্পর্শ করার বিশ্ব রেকর্ডটি ডন ব্র্যাডম্যানের দখলে রয়েছে।
জয়সওয়াল বিশ্ব ক্রিকেটে মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার যিনি নিজের প্রথম চারটি সেঞ্চুরিকেই দেড়শতে পরিণত করেছেন। এর আগে ক্যারিয়ারের প্রথম চার সেঞ্চুরিকেই দেড়শতে রূপ দেওয়ার একমাত্র কীর্তিটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথে
১৫তম টেস্ট শেষে রানসংগ্রহে বিশ্বক্রিকেটে চতুর্থ অবস্থান জয়সওয়ালের। তিনি ১৫৬৮ রান করেছেন। তার আগে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান (২১১৫), মার্ক টেলর (১৮১৮) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভারটন উইকস (১৫৭৬)। পাঁচে থাকা আরেক অজি তারকা মাইকেল হাসি সমানসংখ্যক টেস্টে ১৫৬০ রান করেন।
২২ বছর বয়সে ভারতের হয়ে চারটি করে সেঞ্চুরির কীর্তি গাভাস্কার-বিনোদ কাম্বলি ও জয়সওয়ালের। শচীন ৮টি এবং রবি শাস্ত্রীর সেঞ্চুরি রয়েছে ৮টি। বয়স ২৩ হওয়ার আগে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারেই (২০২৪) তিনটি সেঞ্চুরি করে ফেললেন জয়সওয়াল। ওই বয়সে সমান তিনটি করে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে ভারতের রবি শাস্ত্রী (১৯৮৪) ও শচীনের (১৯৯২)। তবে গাভাস্কার (১৯৭১) ও বিনোদ কাম্বলি (১৯৯৩) ওই সময়েই ৪টি টেস্টে তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবার খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি করা ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে জয়সওয়াল তৃতীয়। তার আগে ১৯৬৭-৬৮ সালে ব্রিসবেন টেস্টে জয়সিমহা (১০১) ও ১৯৭৭-৭৮ সালে একই ভেন্যুতে সুনীল গাভাস্কার সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলিয়ায় অভিষেক টেস্টে। এখন পর্যন্ত হওয়া তিন সেঞ্চুরিই হয়েছে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে।
২৯৭ বলে ১৫ চার আর ৩ ছক্কায় গড়া ১৬১ রানের ইনিংস খেলে মিচেল মার্শের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে স্টিভেন স্মিথের তালুবন্দি হন। চোখের পলকে মাত্র ১৭ বলের ভেতর দ্রুত ৩ উইকেট হারায় ভারত। বাইশ গজ ছাড়েন রিশভ পান্ট, ধ্রুব জুরেল।
ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৮৯ রান যোগ করেন কোহলি। ২৯ রানের ইনিংস খেলে লায়নের বলে বোল্ড হন সুন্দর। এরপর সব আকর্ষণ নিজের দিকে কেড়ে নেন কোহলি। লাবুশেনের তৃতীয় বলে ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে টেস্টে ১৫ ইনিংস পর সেঞ্চুরি পেলেন কোহলি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৯ ইনিংস পর তিন অংকের ঘরে পৌঁছালেন।
সব সংস্করণ মিলিয়ে এটি কোহলির ৮০তম সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দশম এবং টেস্টে সপ্তম শতকের দেখা পেলেন। ভারতের হয়ে বাইরের দেশে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির কীর্তি গড়ে সুনীল গাভাস্কারের পাশে তিনি নাম লিখিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গাভাস্কার ৭ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোহলির নামের পাশে এখন ৭ সেঞ্চুরি।
নীতিশ কুমার রেড্ডির আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ২৭ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। কোহলির সঙ্গে সপ্তম উইকেটে গড়েন ৭৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। কোহলি ১৪৩ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন। তার শতকের সঙ্গে সঙ্গে ভারত ইনিংস ঘোষণা দেয়।
জয়ের জন্য ৫৩৪ রানের লক্ষ্য পেল অস্ট্রেলিয়া। হাতে দুই দিনের বেশি সময় থাকলেও টেস্ট ইতিহাসে এত রান তাড়া করে এর আগে কেউ জেতেনি। ২০০৩ সালে অ্যান্টিগায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দিনের শেষ বিকেলে উসমান খাজার সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন নাথান ম্যাকসুয়েনি । ইনিংসের চতুর্থ বলে রানের খাতা না খোলা ম্যাকসুয়েনিকে ফেরান জাসপ্রিত বুমরাহ। এরপর ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমেছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। মোহাম্মদ সিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে ফেরেন। মার্নাস লাবুশেন ৩ রানে বুমরাহর বলে এলডিব্লু হয়ে সাজঘরে ফেরেন।