বাণিজ্য ডেস্ক :
সংকটকালেও অকটেনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) লাভ করছে লিটারে ২৫ টাকা। আর এ বাড়তি দামের বোঝা পড়ছে গ্রাহকের ঘাড়ে। এদিকে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দাবি, ছয় বছরে তাদের লাভ ৪২ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবিভাগ বলছে, এ লাভের পরিমাণ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্য সমন্বয়ে আধুনিকতার পাশাপাশি বিপিসির স্বচ্ছতা বেশি প্রয়োজন।
গত ৫ আগস্ট একলাফে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত। একবারে বাড়ানো তেলের দামের বাড়তি বোঝায় যখন নাকাল জনসাধারণ, তখনও অকটেনে লিটারপ্রতি বিপিসির লাভ ২৫ টাকা।
বুধবার (১০ আগস্ট) নিজেদের আর্থিক বিবরণী তুলে ধরে জ্বালানি তেল আমদানি ও বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বিপিসি। এসময় সংস্থাটির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, অকেটেনে লিটার প্রতি ২৫ টাকার মতো লাভ হচ্ছে।
এছাড়া ডলারের দাম না বদলালে মাসে তেল বিক্রির মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার ওপর লাভ করা সম্ভব হবে।
এবিষয় বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, যদি জুলাই মাসে একই পরিমাণ ডিজেল ও অকটেন বিক্রি করি, তাহলে সে মাসে আমাদের মুনাফার পরিমাণ ২০৫ কোটি টাকা থাকবে।
এমন অবস্থার মধ্যেই প্রতি লিটার তেল আমদানি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরবরাহে রাজস্ব বিভাগের কাছে কর ছাড়ের আবেদন জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখানে কর পরিশোধ করার একটি বড় বিষয় রয়েছে। আমি সরকারের কাছে কর কমানোর অনুরোধ করেছি। যদি সেটি কমিয়ে নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমার এ জায়গাটিতে স্বস্তি আসে।
এবার আসা যাক, বিপিসির ৬ বছরের লাভের টাকা দিয়ে কেন পরিস্থিতি সামাল দেয়া হলো না? যদিও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দাবি, ছয় অর্থবছরের লাভের পরিমাণ মোট প্রায় ৪২ হাজার ৯৮২ দশমিক ৫১ কোটি টাকা।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের চলতি বছরের সমীক্ষায় ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিসির লাভ দেখিয়েছে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। যেখানে ফারাক প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে তেলের দাম নির্ধারণ ও বিপিসির অর্থবিবরণীর তথ্যগুলো আরও স্পষ্ট করার যৌক্তিকতা দেখাচ্ছেন জ্বালানি বিশ্লেষকরা।
এবিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বিপিসি কত দামে আনছে, কত খরচ করছে, তার কোনো পরিষ্কার ধারণা কারও নেই। কিন্তু বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রক্রিয়ার মধ্যে গেলে আমরা এসব তথ্য গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। প্রতিটি খরচ আমরা পর্যালোচনাও করতে পারি।
তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব মোকাবিলা করে, অর্থনীতির গতিশীলতা ধরে রাখতে, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থাপনার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা।