হোম অর্থ ও বাণিজ্য জেট ফুয়েলের দাম লাগামহীন, ঝুঁকিতে এভিয়েশন খাত

বাণিজ্য ডেস্ক :

উড়োজাহাজ পরিচালনা ব্যয়ের ৪০ শতাংশই হয় তেলে। আর দেড় বছরে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১২০ শতাংশ। যার প্রভাব এভিয়েশন খাতে পড়ায় ভাড়া বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে চরম সংকটে রয়েছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো। তেলের দাম নিয়ে অরাজকতা আরো বাড়লে দেশের এয়ারলাইনসগুলো যেমন বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনি বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাজার দখল করবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আর তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাজারের উপর ছেড়ে দিয়েছে বিপিসি।

কোভিডের আগে ঢাকা-যশোর আকাশ পথের ভাড়া ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। সেখানে বর্তমানে ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। অভ্যন্তরীণ বা বাইরে, প্রতিটি রুটেই উড়োজাহাজ ভাড়া দ্বিগুণ। গত ১৮ মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ৫৪ টাকা।

আর গত তিন মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ২৫ টাকা। গত ১৮ মাসে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ১২০ শতাংশ। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪৬ টাকা। সেখানে ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকায়।

ভাড়া বাড়ায় এমন নৈরাজ্যেই চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। অন্যদিকে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য যাত্রী সংকটে ইতোমধ্যে গুটিয়ে গেছে দু-একটি দেশীয় এয়ারলাইন্স। এ খাতের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কায় আছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

এভিয়েশন খাত টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রণোদনার দাবি জানিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, উড়োজাহাজ অপারেশন ব্যয়ের ৪০ শতাংশই ফুয়েল। জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে ভাড়া বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। লোকসান দিয়ে তো উড়োজাহাজ চালানো যাবে না। এতে করে যাত্রীদের ওপর প্রভাব পড়বে।

এছাড়া আমরা জানি প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ শতাংশের ওপরে, এখাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সরকারের উচিত জেট ফুয়েলের দাম কমানো, এখাতে আরও ভর্তুকি দেওয়া।

প্রায় এক দশক ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃবিশ্বে বিমানের পাশাপাশি যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স। এতে বৈদেশিক রেমিট্যান্স রক্ষা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন অবস্থায় জেট ফুয়েলের দাম হাতের নাগালে না থাকলে এ খাতের বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একইসঙ্গে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বিদেশিরা বাজার দখল করার শঙ্কা জানিয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল হক বলেন, যেভাবেই হোক দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে সরকারকে। কারণ তাদের কম ভর্তুকি দিলেও তারা বৈদেশিক রেমিট্যান্স রক্ষা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান না থাকলে নিজ দেশের অর্থ বাইরে চলে যাবে।

তিনি বলেন, তেলের দাম কমানো না গেলেও এ খাতে যে ভ্যাটসহ অন্যান্য ব্যয়গুলো কমিয়ে তাদের সহায়তা করতে হবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বাড়িয়েছে। এর ফলে বর্তমানে জেট ফুয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা।

বিপিসির তথ্য বলছে, প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক মূল্য এক দশমিক শূন্য ২ ডলার। সেই হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারেই এখন জেট ফুয়েলের দাম লিটার প্রতি ১২১ থেকে ১২২ টাকা।

সরকার ২২ টাকা ভর্তুকি দিয়ে ১০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে না কমলে জেট ফুয়েলের দাম কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিপিসি।

বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এনডিসি সময় সংবাদকে বলেন, জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার, আশপাশের দেশের মার্কেট মূল্য, বিক্রি কিভাবে হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। দাম কমবে না বাড়বে তা আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করবে।

২০২১ সালে জেট ফুয়েলের চাহিদা ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন, যার পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন