নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রকাশিত জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। অনেকে এ সনদকে একতরফা আখ্যায়িত করেছেন। তাদের অভিযোগ— এতে শুধু জুলাই আন্দোলনকে উচ্চকিত করা হয়েছে। কিন্তু বিগত দেড় দশকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অসামান্য অবদান নিয়ে কিছু নেই। শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজনক অধ্যায়কেও সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। তাছাড়াও সনদ বাস্তবায়নে দুই বছরের সময়সীমা নিয়েও অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, আন্তরিকতা থাকলে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজনীতিবিদদের কাছে জুলাই সনদের খসড়া হস্তান্তর করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনের কাছে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রাজনৈতিক নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদের খসড়া পেয়েছি। তবে আরও পর্যবেক্ষণ করে আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর এ নিয়ে মন্তব্য করবো।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় অনেক কিছুই অস্পষ্ট। সেখানে বিগত দিনে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও সংগ্রাম নিয়ে কিছু উল্লেখ নেই। সেগুলো থাকলে আরও ভালো হতো। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের জ্বলন্ত সব প্রমাণ থাকলেও এর বাস্তবায়নে দুই বছর সময় নেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা সেগুলোর সঙ্গে একমত। তবে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তীব্র দ্বিমত পোষণ করছি। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের আগেই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ভিত্তিতেই হবে জাতীয় নির্বাচন।
আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই সনদে যেসব বিষয়ে একমত হওয়া যাবে— আন্তরিকতা থাকলে সেগুলো সংসদের প্রথম অধিবেশনেই পাস করা সম্ভব। ডকট্রিন অব নেসেসিটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কীভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। তাহলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। এ নিয়ে যারাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, জনগণ তাদেরকে মেনে নেবে না।
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে শুধু জুলাইকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অথচ জুলাইয়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। তাদের ত্যাগের কোনও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আমরা জুলাইকে যেমন ধারণ করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও লালন করি। খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়ের স্বীকৃতি থাকলে পরিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য হতো। তিনি অভিযোগ করেন, বিগত দেড় দশকের নির্যাতিত মানুষের ত্যাগের কথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাছাড়া সমাজের খেটে খাওয়া ও নিম্নবিত্ত মানুষের কথা নেই।
গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, জুলাই সনদে শুধু জুলাইকে উচ্চকিত করা হয়েছে। সেখানে শুধু জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদেরকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কোনও কথা নেই। আমরা মনে করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় জুলাই এসেছে। এটিও আমাদের গৌরবের। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যেমন মুক্তিযুদ্ধকে একচেটিয়া ব্যবহার করেছে, ঠিক বর্তমান সরকারও জুলাইকে নিয়ে অতিরঞ্জিত কিছু করলে এর পরিণতি ভালো হবে না।
এছাড়া বিগত দিনে বিএনপি ও জামায়াতসহ প্রতিটি গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে কোনও স্বীকৃতি নেই। বিশেষ করে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, তা নিয়েও খসড়ায় কিছু নেই। এটি হতাশার।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল- (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, জুলাই সনদকে নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে গণহত্যার বিচার করা জরুরি। কিন্তু খসড়ায় সে ধরনের নির্দেশনা নেই। এছাড়া বিগত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নির্যাতিতদের বিষয়ে সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এনডিএম এর মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, জুলাই সনদ একটা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জুলাই সনদের ঐকমত্যে আসা বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পথে হাঁটবে বলেই বিশ্বাস করি। তবে সনদের খসড়ায় ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়নি। যে ব্যাপারে আমরা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। জুলাই সনদের বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে জনকল্যাণের স্বার্থে আরও বিস্তৃত বিষয় উল্লেখ করবেন। চূড়ান্ত রায় আসলে জনগণের ভোটেই নির্ধারিত হতে হবে।