জাতীয় ডেস্ক :
তরুণ প্রজন্ম ও নবীন ভোটারদের জীবনের প্রথম ভোট নৌকায় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন মৌলভীবাজার আয়োজিত দুই দিনব্যাপী (৮-৯ নভেম্বর) ‘মৌলভীবাজার জেলা সাহিত্যমেলা ২০২২’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
কে এম খালিদ বলেন, নৌকা হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির শিখরে রয়েছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মকে নৌকায় ভোট দেয়া জরুরি।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে ‘মৌলভীবাজার জেলা সাহিত্যমেলা ২০২২’-এর উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য অসীম কুমার উকিল এমপি। আরও আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক নূরুন্নাহার খানম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান ও মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জেলা পর্যায়ের সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্ম জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো দেশের ৬৪ জেলায় সাহিত্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী বছর উপজেলা পর্যায়ে সাহিত্যমেলা চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় সাহিত্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, মৌলভীবাজার সাহিত্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি জেলা। এ জেলায় দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিকের পাশাপাশি অনেক জ্ঞানী-গুণী জন্মগ্রহণ করেছেন, যাদের অনেকেই জাতির পিতার সান্নিধ্য লাভ করেন।
কে এম খালিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগের জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন ৮৭৭ জন ছাত্রের বিপরীতে তিনি ছিলেন একমাত্র ছাত্রী। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা শতকরা ৪০ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, মৌলভীবাজার জেলার আরেকজন বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, যিনি রম্যসাহিত্য ও ভ্রমণকাহিনি লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এ ধরনের বহু লেখক-সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে এ জেলার পবিত্র মাটিতে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে সংসদ সদস্য নেছার আহমদ বলেন, রাজনীতি ও সংস্কৃতির সুষম সমন্বয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি। সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। জেলা সাহিত্যমেলার মাধ্যমে এ জেলা থেকে তরুণ, মেধাবী ও সৃজনশীল নতুন লেখক বের হয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, এ বাংলায় (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত সাহিত্য সম্মেলন আয়োজিত হতো। এসব সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনামলে তা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে প্রথম সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কবি-সাহিত্যিকদের ‘মানবাত্মার সুদক্ষ প্রকৌশলী’ মর্মে অভিহিত করেন এবং কবি-সাহিত্যিকদের তাদের সৃষ্ট সাহিত্যকর্মে সাধারণ মানুষের জীবন, তাদের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না প্রতিফলনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসের রিকাবদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা সুজন, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মোহিবুল আমীন ও প্রাবন্ধিক মো. আব্দুল মতিন। স্বাগত বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মিন্টু।