জাতীয় ডেস্ক :
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের এক কোটি ২০ লাখের বেশি শিশুর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বাংলাদেশ। উপকূলবর্তীসহ ২০ জেলা তালিকায় শীর্ষে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দিতে না পারলে ব্যাহত হবে টেকসই উন্নয়ন।
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন কিংবা খরা। পরিবারগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়লে সবচেয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়ে শিশুরা। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ২০ জেলার ১ কোটি ২০ লাখ শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইক্লোনের ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলের ৪৫ লাখ শিশু, খরায় দুর্ভোগে পড়া শিশুর সংখ্যা ৩০ লাখের মতো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের কবলে পড়া এসব শিশু গৃহহীন, ক্ষুধার্ত, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে। হুমকিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সুরক্ষা। আছে শিশু শ্রম, যৌন নিপীড়নের শিকার, পাচারের ঝুঁকিও।
নদীভাঙনের কবলে পড়া মুন্সিগঞ্জের চরমুনের ১১ বছর বয়সী মীম আক্তার। নদী ভাঙনের একরাশ উদ্বেগ তার চোখে-মুখে। সে সময় সংবাদকে জানায়, নদীতে আশপাশের বাড়িগুলো সব ভেঙে যাচ্ছ। নদী ভাঙতে ভাঙতে তাদের বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে। তাই ভাই-বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে চিন্তা ভর করেছে তার মনে।
একই এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না রাণী বলেন, ‘দেওররের বাড়িঘর ভাইঙা গেছে, আমাদেরটাও ভাইঙা যাইবো, আমগো তো আর কিছুই থাকব না।’ একই অবস্থা ৭০ বছরের আবুল ফজলের। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘তিন কানি জমি, ঘর-দুয়ারসহ একরাত্তিতে সব গ্যাছে গা।’ আর বণিতা ঘোষ আক্ষেপের সাথে বলেন, ‘ঘর নেই, বাড়ি নেই, যামু কই? পরের বাড়িতে উঠছি দুই মাইয়্যা নিয়ে। চেয়ারম্যান বলসিলো বালু ফেলবো, তা ফেলেনি। সাহায্যে কেউই আসেনি এখনও। ‘
জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ যেখানে শিশু, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলে সরকারের টেকসই উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে শঙ্কা জানান ইউনিসেফের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ শামীমা সিদ্দিকী। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, সরকারের পরিসেবা প্রদানকারী মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো যাদের প্রকল্প আছে, তাদেরকে ক্লাইমেট চেঞ্জ রিলেটেড, চিলড্রেন ভালনারেলিভিটিস প্রায়োরিটি অ্যাকশন ইনক্লুডস করে বাস্তবায়ন করা উচিত। আর এই প্রসেসে শিশু ও যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা এবং তাদের মতামত নিয়ে সে অনুযায়ী চাইল্ড সেনসিটিভ নীতি ও প্ল্যান রাখা এবং তা বাস্তবায়ন করা।
ইউনিসেফের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ শামীমা সিদ্দিকী আরও বলেন, ইউনিসেফের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের সাথে অ্যাডভোকেসি করে থাকি, যেমন- ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান, সেটা যেন ইয়ুথ প্রায়োরিটিস রিফ্লেক্ট করে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সেক্টরের যেসব পলিসি ও প্রকল্প আছে, যেমন- হেলথ সেক্টর প্ল্যান, ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন পলিসি, ন্যাশনাল সোস্যাল সিকিউরিটি প্ল্যান, প্রাইমারি এডুকেশন প্রোগ্রাম – এসবের মাঝে ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট বেসিক সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেম শক্তিশালী করা বাংলাদেশের। যাতে করে যে কোন অবস্থায় শিশুরা তাদের পরিসেবা- স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন, চাইল্ড প্রোটেকশন, সোস্যাল প্রোটেকশন থেকে কোনভাবেই তারা যেন বঞ্চিত না হয়।
অন্যদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত পারসপেক্টিভ প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। সেখানেও দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে- কিভাবে অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড মিটিগেশন করা যাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে।’
জলবায়ু সংকটের প্রভাবের শিকার হবার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৫তম।
