হোম অন্যান্য জবির বাসে পরিবহন শ্রমিকদের হামলা, শিক্ষার্থীসহ আহত ৯

জবির বাসে পরিবহন শ্রমিকদের হামলা, শিক্ষার্থীসহ আহত ৯

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 14 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীবাহী উল্কা-৪ বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ড্রাইভার, হেলপার ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মোট ৯ জন আহত হয়েছেন।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে মহাখালীর বাস টার্মিনাল এলাকায় একতা পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপাররা এ হামলায় চালায় বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

আহতরা হলেন বাসচালক জগদীশ চন্দ্র, হেলপার বিলামিন আহমেদ, সাংবাদিকতা বিভাগের মিজানুর রহমান সোহাগ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের ইসাক হোসাইন, ফিন্যান্স বিভাগের সাহাদাত হোসেন, ১৯তম আবর্তনের আঁখি আলম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আঁখি মনি, মার্কেটিং বিভাগের নিহাল রহমান এবং রসায়ন বিভাগের দেওয়ান সাইফ।

এর মধ্যে বাসচালক জগদীশ চোখে ও হাতে মারাত্মক জখম হওয়ায় তাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, মহাখালী ইউটার্ন এলাকায় একতা পরিবহনের বাসটি সড়ক ব্লক করে দাঁড়িয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি অনেকক্ষণ ধরে বাসটিকে হর্ন দিলেও সড়ক ব্লক করে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে সামনে এগোতে পারছিল না জবির বাসটি। এ ঘটনায় উল্কা-৪ বাসচালক জগদীশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় একতা বাসচালকের। একপর্যায়ে মহাখালী টার্মিনালের প্রায় অর্ধশতাধিক বাসচালক ও ড্রাইভার মিলে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় জবির শিক্ষার্থী ও বাসের ওপর।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘একতা বাস এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে আমাদের বাসচালক যখন বাসটির ড্রাইভারকে বলে তখন সে লাঠি দিয়ে আমাদের বাসচালকের ওপর হামলা চালায়। তারপর তাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা বাধা দেই। তখন আমাদের ওপরও হামলা চালায়। বাসে মেয়েরা ছিল। তাদের ওপরও ইট-পাথর ছুড়ে মারে।’

বাসচালক জগদীশ বলেন, ‘মহাখালী বাস টার্মিনালে আমাদের গাড়ির সামনে একতার বাস ছিল। একতা বাসের সামনে কোনও গাড়ি ছিল না। তাদের বারবার সাইড দেওয়ার কথা বললেও সাইড না দিয়ে গাড়ি থেকে হেলপার ও ড্রাইভার লাঠি নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। সেখানে একতা বাসের আরও অনেক কর্মচারী ছিল, তারাও আমাদের ওপর হামলা করে। আমার হাত ভেঙে দিয়েছে এবং সারা শরীরে জখম করেছে। চোখে আঘাত করেছে। আমি তাদের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জবির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের ড্রাইভার জগদীশ মারাত্মক আহত। তার চোখ ঠিক থাকবে কিনা নিশ্চিত না। আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়েছে। শুধু জবির বাস না, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই এমন হামলা কাম্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সেই ড্রাইভার-হেলপার পলাতক। একতা বাসের মালিকপক্ষ এসেছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তারাও বিষয়টির সমাধান চায়। জবির কোনও বাসে যেন এমন হামলা আর না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। একটা সমাধান আসবে।’

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের ফেসবুক পেজ থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, একতা পরিবহনের স্টাফরা গাড়ি থামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ির ভেতর লাঠিসহ প্রবেশ করে শিক্ষার্থীসহ ড্রাইভারকে আক্রমণ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। হামলার সময় শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গেলে ড্রাইভার জগদীশকে মারধর করা হয়। ফলে তিনি গুরুতর আহত হন। তার চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এতে আরও জানানো হয়, পরবর্তীতে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বিষয়টি সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পারস্পরিক আলোচনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস মেরামত, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন এবং হামলায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার সম্মতির ভিত্তিতে দুই পক্ষের সমঝোতায় বিষয়টি সুরাহা হয়।

জানা যায়, দুই পক্ষের দীর্ঘ আলোচনার পর একতা পরিবহনকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের দফতর সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের একটি বাসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসের ঝামেলা হয়। বিষয়টি আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে উপস্থিত থেকে সমাধান করে এসেছি। আশা করছি ছাত্র ভাইয়েরা বিষয়টি আর বাড়াবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘ড্রাইভারের চিকিৎসা বাবদ ১ লাখ টাকা, হেলপারের চিকিৎসা বাবদ ৩০ হাজার এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হলে সেটিও তারা বহন করবে। এছাড়া বাস মেরামত বাবদ পরিবহন প্রশাসককে নগদ ১২ হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন