আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আবারও চাঁদের বেশ কিছু নতুন ছবি পাঠাল ভারতের চন্দ্রযান-৩। কাছ থেকে তোলা চাঁদের এসব ছবি গত বুধবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইসরোকে পাঠায় মহাকাশযানটি। এর আগে গত ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের পর চাঁদের খণ্ডিত পৃষ্ঠের (চাঁদের গায়ের ছিদ্র ছিদ্র অংশ) ছবি তুলে পাঠায় চন্দ্রযান-৩।
কমবেশি ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে তোলা এসব ছবিতে ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছে চাঁদ। এতে চাঁদের পৃষ্ঠের এবড়োথেবড়ো শত শত গর্ত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর মানুষ যেগুলোকে চাঁদের ‘কলঙ্ক’ বলে থাকে।
গত বুধবার (১৬ আগস্ট) শেষবারের মতো কক্ষপথ বদল করে চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছায় চন্দ্রযান-৩। এ সময় চাঁদের থেকে ১৫৩ কিমি x ১৬৩ কিমি উচ্চতায় কক্ষপথে চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছিল এটি। অর্থাৎ চাঁদের প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি পৌঁছায়।
এরপর চন্দ্রাভিযানের লক্ষ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শেষ পর্বের সূচনা করে চন্দ্রযান-৩। চাঁদের মাটিতে পা রাখতে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে মহাকাশযানটির প্রপালশন মডিউল থেকে পৃথক হয় ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে বুধবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ক্যামেরার শাটারে ক্লিক করে চন্দ্রযান-৩। সঙ্গে সঙ্গেই সেসব ছবি পাঠিয়ে দেয় ইসরোর কাছে। এসব ছবিতে শত শত গর্ত দেখা যাচ্ছে। এর প্রতিটি গর্তের আলাদা আলাদা নাম ও ব্যাখ্যা রয়েছে। সেই সসব তথ্যই ইসরোর কাছে পাঠিয়েছে চন্দ্রযান-৩।
চন্দ্রাভিযানে চন্দ্রযান-৩’র প্রপালশন মডিউল থেকে ল্যান্ডার ‘বিক্রমে’র বিচ্ছিন্ন হওয়ার এই পদক্ষেপকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইসরো। আর মাত্র ৬ দিন পর আগামী ২৩ আগস্ট চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা বিক্রমের।
এই ল্যান্ডার বিক্রমের মধ্যেই রয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিতে বিক্রমের অবতরণের পরই বেরিয়ে আসবে এটি। এরপর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ঘুরে ঘুরে পরীক্-নিরীক্ষা চালাবে।
গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ‘চন্দ্রযান-৩’-কে। উৎক্ষেপণের ২২ দিন পর যানটি গত ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে।
এর আগে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীর কক্ষপথেই ঘুরছিল মহাকাশযানটি। এই সময় এক এক করে পাঁচবার কক্ষপথ পরিবর্তন করানো হয় তার। এরপর গত ১ আগস্ট চাঁদের বলয়ে (স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স) প্রবেশ করে চন্দ্রযান-৩।
এরপর ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে এটি। এরপর ধাপে ধাপে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে করতেই চাঁদের আরও কাছাকাছি আসে চন্দ্রযান-৩। জানা গেছে, বিক্রম যখন চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে, তখন এর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর ধীরে ধীরে এটি নেমে যাবে চাঁদের দিকে।
এরপর ল্যান্ডার বিক্রম যখন চাঁদের মাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকবে, তখন সেটি পালকের মতো করে নীচের দিকে নামবে শুরু করবে। এতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর খুলে যাবে বিক্রমের দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান।
এরপর প্রজ্ঞান চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। চাঁদ আদৌ মানুষের বসবাস উপযোগী কিনা, তা-ই খতিয়ে দেখবে চন্দ্রযান ৩-এই রোভার।
ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবতরণ করার কথা ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞানের। এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, তাদের কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছে অবতরণ করেছে তারা।
এরই মধ্যে ভারতের চন্দ্রযান-৩-কে টেক্কা দিতে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে রাশিয়ার লুনা-২৫। ভারতের প্রায় এক মাস পর গত সপ্তাহে (১১ আগস্ট) এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছিল রাশিয়া। লুনা-২৫’রও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার কথা। আগামী ২১ থেকে ২৩ আগস্টের মধ্যে এটি চাঁদে অবতরণ করার পরিকল্পনা করছে।
তবে দুটি চন্দ্রযান যদি একই সময়ে তথা ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে তাতে কোনো সমস্যা হবে না, এমনটাই জানিয়েছে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস।