হোম জাতীয় ঘরে ঢুকল মর্টারশেলের অংশ, অল্পের জন্য বাঁচল বাংলাদেশি পরিবার

ঘরে ঢুকল মর্টারশেলের অংশ, অল্পের জন্য বাঁচল বাংলাদেশি পরিবার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 79 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

‘শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে মর্টারশেলের বিস্ফোরিত অংশ আমার ঘরের চাল ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। একটুর জন্য আমাদের পরিবার প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। আমরা খুব ভয়ে আছি, ঘরেও নিরাপদে থাকতে পারছি না।’ ভয়াবহ রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে সময় সংবাদকে এভাবেই বললেন তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা ভুলু।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলছে তুমুল যুদ্ধ। সামরিক জান্তা বাহিনীর বিওপি বা চেকপোষ্ট দখলে নিতে মরিয়া বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি। এ নিয়ে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তাদের ছোড়া গুলি, মর্টারশেল ও রকেট লাঞ্চারের বিস্ফোরিত অংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকায় বসতঘরের ওপরে এসে পড়েছে। এদিন এতে কোনো হতাহত না হলেও রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে গোলাগুলির ঘটনা যুদ্ধের রূপ নেয় ব্যাপক আকারে।

মুহুর্মুহু গোলা বর্ষণ, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চারের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু তাই নয়, তাদের ছোড়া গুলির আঘাতে তুমব্রু হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা রবীন্দ্র ধর কোনার পাড়ার বাসিন্দা শামসুল আলম ও এক নারী আহত হয়েছে। তুমুল লড়াইয়ের এক পর্যায়ে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির লাগাতার আক্রমণে ক্যাম্প ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা।

বিকেল নাগাদ জান্তা বাহিনীর ৩৯ সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্প এ আশ্রয় নেয়। এদিকে ব্যাপক এ গোলাগুলির ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার বাসিন্দারা। ভয়ে ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। অনেকেই প্রাণের ভয়ে নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই আতংক, উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত ঘরে বসেই কাটিয়েছে। ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছে না অভিভাবকরা। এছাড়াও কৃষি ক্ষেতে যেতে ও দৈনন্দিন কাজ করতেও ভয় পাচ্ছে এলাকাবাসী।

এদিকে সীমান্তে উত্তেজনার কারণে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। নিরাপত্তার কারণে কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তুমব্রু বাসার এলাকার বাসিন্দা রূপলা ধর বলেন, ‘রোববার সকাল ৮টা থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। পরিবারের সবাই না ঘুমিয়ে বসে আছি। অনেক ভয় হচ্ছে, কখন কোনো সময় কী হয়, তা আমরা জানি না। আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালের ওপর বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চার এসে পড়েছে শুনেছি। অনেকের উঠানে গুলিও এসে পড়েছে। এ ঘটনায় ঘরের বাইরে যেতেও ভয় হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রোববার ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। এতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে আমাদের ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকা। এলাকাবাসীদের বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে ৫টি বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের চলাচল সীমিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন