রাজনীতি ডেস্ক:
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই ও তার সমর্থকরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী পথসভা করেছেন।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শৈলকুপা পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফাজিলপুর মাদ্রাসা চত্বরসহ একাধিক স্থানে সভা করেছেন। শুধু তাই নয়, তার সমর্থকেরা বুধবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারকাজে নিয়োজিত দুটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।
এর আগে বুধবার বিকেলে আব্দুল হাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া অপর দুই আসামি হলেন- শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ও সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন। শুনানির নির্ধারিত দিনে এসব আসামি আদালতে হাজির না থাকায় ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালত এ পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে আব্দুল হাই ও তার সমর্থকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলেছে। একর পর এক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর হামলা-ভাঙচুর, ভয়ভীতি প্রদান করছে। আচরণবিধি লঙঘনের একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন বাদী হয়ে পৃথক ৫টি মামলা করেছে হাই ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছেন না প্রার্থী আব্দুল হাইসহ তার অনুসারীরা।
বুধবার বিকেলেও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম দুলালের স্ত্রী মুনিয়া আফরিন ও সমর্থকদের প্রচার কাজে বাধা দিয়েছে নৌকার সমর্থকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাঁচেরকোল ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার শেষে ফেরার পথে কচুয়া বাজারে পৌঁছালে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের সমর্থকরা পথরোধ করে। কাঁচেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার মামুনের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা ইয়াসিন কাজী, পুলিশের ওপর হামলার মামলার আসামি ডিশ বাবু, রাসেল, পলাশ ও মোহাম্মদ আলী হুমকি-ধমকি দেয়। তারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। একপর্যায়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলহরি ইউনিয়নে প্রচারকাজ চলাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে নৌকার সমর্থকরা।
এদিকে শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামে সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নৌকায় ভোট না দিলে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে ভোটের পর তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাবদার হোসেন মোল্লার অনুসারীরা। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে।
আব্দুল হাইয়ের সমর্থকদের একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনে ও বেপরোয়া আচরণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ভোটাররা। বারবার অপরাধ করেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় হাই সমর্থকেরা বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। তাদের গ্রেপ্তারে তেমন কার্যকর পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
যদিও ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচনের আচরণবিধি যিনিই লঙঘন করবে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা যে কোনো আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও প্রকাশ্যে নির্বাচনী পথসভা করার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে শৈলকুপা থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে আমরা কোনো তথ্য পায়নি। আদালত থেকে পরোয়ানা থানায় আসলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই এমপি ও তার সমর্থকরা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলা, হুমকি-ধমকি প্রদান, পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়াসহ এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত করে ইতোমধ্যে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি একাধিক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। অনুসন্ধান কমিটি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এমপি হাই ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের একাধিক সুপারিশ করে।
সে অনুযায়ী ইসির নির্দেশনার আলোকে গত ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তায়জুল ইসলাম। প্রথম দফায় মামলা করার পরও বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে হাই ও তার সমর্থকরা। এ অবস্থায় গত ২২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে পৃথক অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত সোমবার এসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশন।
ওই নির্দেশনার আলোকে গত মঙ্গলবার আব্দুল হাই ও শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাকিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন করে তিনটি মামলা হয়। এসব মামলায় আব্দুল হাই ছাড়াও আসামি করা হয়েছে, শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাকিম, হাকিমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান ইকু ও শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা এবং জামিনুর রহমান বিপুলকে।