হোম Uncategorized গ্রাম ভিত্তিক গড়ে তোলা হচ্ছে আপদকালীন খাদ্য ভান্ডারতালায় করোনা মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের মহতী উদ্যোগ

গ্রাম ভিত্তিক গড়ে তোলা হচ্ছে আপদকালীন খাদ্য ভান্ডারতালায় করোনা মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের মহতী উদ্যোগ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 87 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে স্থানীয় জনগণ। বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ এর সহযোগিতায় তালা উপজেলার ৬টি ও পাশর্বর্তী কেশবপুরের ১টি গ্রামের জনগণ এ উদ্যোগ গ্রহণ করে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তাদের কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও ২টি গ্রামের জনগণ সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।

সরেজমিনে গেলে জাতপুর গ্রামের হেদায়েত উল্লাহ মুকুল, তামজীদ বিশ^াস, গোপালপুরের তীর্থ কুমার দে, ডাংগানলতা গ্রামের কামাল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীরা জানান, করোনা ভাইরাসের এই ভয়াবহ সময়ে বিশেষ করে দরিদ্র মানুষদের খাদ্য সংকট দূর করতে প্রাথমিকভাবে উপজেলার ৭টি গ্রাম ও দু’টি শহরকে মডেল হিসেবে নিয়ে একটি কর্মকৌশল গঠন করা হয়।

গ্রামের উদ্যোগী ও উৎসাহী যুবকদের নিয়ে এজন্য শক্তিশালী একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গ্রামবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ক্ষুধা নিবারণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা চালানো। আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য সংগ্রহ, মজুদ করা ও খাদ্য সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য সরবারহ করা। এছাড়া সরকারীভাবে কোভিড-১৯ এর সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় দরিদ্র মানুষের জন্য দেয়া ত্রাণ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করা।

কমিটির উপদেষ্টা তালা শহরের অচিন্ত্য সাহা জানান, করোনার প্রাদূর্ভাব মোকাবেলায় গ্রামবাসী নিজেদের উপলদ্ধি থেকে সংগঠিত হয়ে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে প্রতি গ্রামের সাহসী যুব সমাজকে নিয়ে যুব কমিটি এবং অভিজ্ঞ-প্রজ্ঞাবান বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়।

এই উভয় কমিটির সদস্যবৃন্দ উত্তরণের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে স্ব-স্ব গ্রামের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং গ্রামের হতদরিদ্র ও কর্মহীন প্রতিবেশীরা যাতে খাদ্য সংকটের সম্মূখীন না হয় তার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই নীতিমালার আলোকে প্রতি গ্রাম কমিটি স্ব-স্ব গ্রামের জনগণকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে যেমন- স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান করা, সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির শিষ্ঠাচার মেনে চলা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে যাতে লকডাউন করা হয় তার উদ্যোগ নেয়া এবং করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাদ্য সরবরাহ করা ইত্যাদি স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং তা নিয়মিত কার্যকরীভাবে অনুশীলন করা হয়।

এছাড়া হতদরিদ্র ও কর্মহীন গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সামগ্রীও বিতরণ করা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া উক্ত কার্যক্রমে এ পর্যন্ত ৭টি গ্রামে প্রায় ৮৭৫০ জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। একইভাবে হতদরিদ্র কর্মহীন প্রতিবেশীরা যাতে খাদ্য সংকটের মুখোমুখী না হয় তার জন্য প্রতি গ্রাম কমিটি স্ব-স্ব গ্রামে স্বচ্ছল গ্রামবাসীদের নিকট থেকে খাদ্য ও অর্থ সংগ্রহ করে আপদকালীন গণখাদ্যভান্ডার গড়ে তুলেছে।

উত্তরণ প্রতি কমিটিকে খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করে। এই গণখাদ্যভান্ডারগুলো থেকে ইতিমধ্যে হতদরিদ্র ও কর্মহীন ২৭৭টি পরিবারের মধ্যে পরিবার প্রতি ১০-২০ কেজি চাল, ২-৪ কেজি ডালসহ কিছু কিছু গ্রামে ১ লিটার সোয়াবিন তেলও বিতরণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় হতদরিদ্র জনগণের আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এই ৪/৫ মাসে কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। প্রতিমাসে ৭টি গ্রামের প্রায় ৪ শত পরিবারকে অথবা ২ হাজার মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে এবং আগামী ৩/৪ মাস এ বিতরণ কার্যক্রম চলবে। এছাড়া এই কার্যক্রমের মধ্যে তালা সদর ও চুকনগর বাজারসহ আরও ২টি গ্রামে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই এই এলাকাগুলোতে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

এ কার্যক্রমে উপকারভোগি জাতপুর গ্রামের স্বামীহারা মাছুরা বেগম বলেন, “আমি একজন দুঃস্থ মানুষ। গ্রাম কমিটি থেকে খাবার পেয়ে আমি খুব খুশী। আমি জানি পর পর ৩/৪ মাস আমাকে খাবার দেয়া হবে। কমিটি যদি খাবার না দিত তাহলে মাঝে মাঝে আমাদের না খেয়ে থাকতে হতো এবং পরিবার পরিজন নিয়ে বিপদে থাকতাম।”

উত্তরণের পক্ষে এই কার্যক্রমের সমন্বয়ক জাহিদ আমিন শ^াশত বলেন, “আমাদের গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। পূর্বে গ্রামীণ সমাজ যখন বিভিন্ন ধরণের সংকটের সম্মুখীন হয়েছে তা পরম্পরায় গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি করোনাকালীন এই মহাদুর্যোগের সময়ে প্রতি গ্রামের জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাহলে বাংলাদেশের সকল গ্রাম তথা আমাদের প্রিয় দেশ একদিন অবশ্যই করোনা মুক্ত হবে।”

স্থানীয় জনগণের মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারের একার পক্ষে সকলকে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। গ্রাম ভিত্তিক গড়ে তোলা এ প্রকল্পে দিনশেষে স্থানীয় মানুষ অবশ্যই উপকৃত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন