হোম অন্যান্যসারাদেশ গ্রাম পুলিশ হত্যা মামলার মূল আসামিসহ গ্রেফতার ২

নড়াইল প্রতিনিধি :

নড়াইলের লোহাগড়ায় বকুল শেখ (৪০) নামে এক গ্রাম পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা মামলার মূল আসামিসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৮ মে রাতে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনাটি ঘটে। বকুল শেখ কুমড়ি গ্রামে পূর্ব পাড়ার মৃত বদির শেখের ছেলে। তিনি দিঘলিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনায় ৩০মে নিহতের ছেলে রমজান শেখ (২৫) বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় সাত জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের এর পরপরই ৩০মে এজাহারনামীয় ২নং আসামি আইনাল শেখের ছেলে রুবেল শেখ (৩৪) কে আটক করে লোহাগড়া থানা পুলিশ । তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (২ জুন) নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় ১নং আসামী লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের মোসলেম শেখ ওরফে পাগল কটার ছেলে আজমল শেখ ওরফে জাহিদ শেখ (৩২) কে গ্রেফতার করে লোহাগড়া থানা পুলিশ। তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি ছোরা জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আজমল শেখ, নড়াইল, লোহাগড়া ও নড়াগাতি থানার একাধিক চুরি, দস্যুতা ও ডাকাতি মামলার আসামি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি আজমল শেখ ওরফে জাহিদ শেখ (৩২) ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

শনিবার (৩ জুন) দুপুরে নড়াইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের হলরুমে পুলিশ সুপার মোসা: সাদিরা খাতুন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়, ভিকটিম বকুল শেখ ও আসামিদের মাঝে দীর্ঘদিন যাবৎ পারিবারিক কলহ ও জমি-জমা নিয়ে গ্রাম্য শত্রুতা চলে আসছিল। গত ২৮ মে সন্ধা সাড়ে ৭টার দিকে কুমড়ী পূর্বপাড়ার মতিয়ারের চায়ের দোকান থেকে ফিরছিলেন বকুল। পথিমধ্যে গোলাপ খাঁর মাছের ঘেরের কাছে পৌঁছামাত্র দুর্বৃত্তরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় বকুলের চিৎকার শুনে তার স্বজন ও আশপাশের লোকজন গিয়ে গুরুতর অবস্থায় বকুলকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বকুল শেখ সম্পর্কে আজমল ওরফে জাহিদ শেখের ফুফা। আজমল শেখ ঢাকায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে। বকুলের ছেলেরা দীর্ঘদিন যাবৎ আজমলের স্ত্রী,কন্যা ও বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বকুলের বড় ছেলে রমজান আগে আজমলের ২য় স্ত্রী পিয়াকে নিয়ে ভেগে গিয়েছিল। এ বিষয় আজমল বকুলের কাছে বিচার চাইলেও কোন বিচার পায়নি। আজমল ডাকাতি ও দস্যুতা মামলার এজহারভূক্ত আসামি। এছাড়া সে চুরি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হওয়ায় সে পলাতক থাকত। আজমলের অভিযোগের কারণে কিছুদিন আগে বকুল ও তার স্ত্রী চায়না আজমলের মাকে গালিগালাজ করে। এ থেকেই মূলত আজমলের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

হত্যাকান্ডের দিন গত ২৮মে আজমলের একজন সহযোগী গ্রামে এসে তাকে গোপীনাথপুর আসতে বলে। আজমল আসলে দুজনে ভ্যানে করে কোটাকোল গ্রামে এসে বকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা ছুরি, ছ্যান ও বাঁশের সড়কি নিয়ে একটি কুড়েতে অবস্থান করে। অন্য সহযোগিদের মাধ্যমে ববুলের খোঁজ নিতে থাকে। কুমড়ী পূর্বপাড়ার মতিয়ারের চায়ের দোকান থেকে চা পান শেষে বকুল গোলাপ খাঁর মাছের ঘেরের কাছে আসলে একজন প্রথমে বকুলের মাথায় কোপ মারে, আরেকজন ছুরি দিয়ে বকুলের পেট, দাপনা ও বুকে কোপ দেয়। আজমল সড়কি দিয়ে বকুলের পেটে আঘাত করে।

এ সময় পুলিশ সুপার মোসা: সাদিরা খাতুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো: রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: দোলন মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপ¯) মো: তারেক আল মেহেদী, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা (ওসি) মো: নাসির উদ্দিন, জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা,বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেটট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক কর্মি, সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন