জাতীয় ডেস্ক:
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করা হবে এমন স্লোগান নিয়ে কাজ করলে গ্রামে অপরিকল্পিত নগরায়নের সৃষ্টি হবে। এতে এলাকার অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিআইপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্থানিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন: আগামীর চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন বিআইপি সভাপতি।
আদিল বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত না হলেও প্রকল্প সম্পর্কিত দেশের গ্রামগুলোতে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৩০টি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে এবং ৩৬ সমীক্ষা করা হয়েছে। এসব সমীক্ষার আলোকে ১৫টি গ্রামকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
তবে পরিকল্পনা সংস্থা তৈরি না করে প্রকৌশলীদের সংস্থা দিয়ে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ওপর যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে অবকাঠামো তৈরির দিকে ঝুঁকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান বিআইপি সভাপতি।
গ্রামঞ্চলে অপরিকল্পিত অবকাঠামোর ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে আদিল বলেন, বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাসমূহের সাম্প্রতিক সময়ে অতি ব্যয়বহুল ভবন বা অবকাঠামো প্রকল্পের দিকে অতি আগ্রহ থাকার কারণে গ্রামীণ এলাকার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় ভবন বা অবকাঠামো নির্মিত হবে। এই প্রকল্পে পরিকল্পনাবিদদের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ দুর্বলভাবে থাকায় ও প্রকৌশলীদের সংগঠন দ্বারা প্রকল্প পরিচালিত হওয়ার কারণে এই সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তিনি বলেন, দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নে উপজেলা পর্যায়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা বিভাগ তৈরি না করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ দুরূহ।
এ ছাড়া পৌরসভার মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হলেও গেজেট করা হয়নি। ফলে দেশের বিপুল আয়তনের অতি গুরুত্বপূর্ণ সেকেন্ডারি শহরগুলো পরিকল্পনাহীন ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে উঠছে, যা পরিবেশকে ধ্বংস করছে এবং নগর এলাকা হয়ে পড়ছে আবাসযোগ্য। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সক্ষমতা পৌরসভাগুলোর নেই বলে মন্তব্য করেন আদিল মুহাম্মদ খান।
বর্তমান সরকারের সাফল্য নিয়ে বিআইপি সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকারের যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ এর মাধ্যমে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মানোন্নয়ন করেছে যা সাধুবাদযোগ্য। দেশের রেল যোগাযোগের অবকাঠামো ও নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে অনেকের জন্য অনুকরণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য রয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, পরিকল্পনাবিদ হোসনেআরা আলো, পরিকল্পনাবিদ মো. ফাহিম আবেদীন, পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রিয়াজ উদ্দীন প্রমুখ।