জাতীয় ডেস্ক :
রাজধানীর মিরপুরে ভবনের গ্যাসলাইনে লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আরও একজন মারা গেছেন। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রওশন আরা বেগম (৭০)। তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তিনি ভবনমালিক ফুল মিয়ার প্রথম স্ত্রী।
শিশুসহ দগ্ধ সাত জনের মধ্যে এ নিয়ে এ ঘটনায় মারা গেলেন চারজন। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন গণমাধ্যমকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিনা বেগম (৫০)। তার শরীরেরও ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
মৃতরা হলেন ভবনমালিক ফুল মিয়ার প্রথম স্ত্রী রওশন আরা বেগম, দ্বিতীয় স্ত্রী রিনা বেগম, রিনা বেগমের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও গ্যাসমিস্ত্রি সুমন।
এ ঘটনায় দগ্ধ অন্যরা হলেন ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া রেনু বেগম (৩৫), পাশের বাসার বাসিন্দা নাজনীন (২৫) ও তার মেয়ে নওশীন (৫)। সবাই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই গ্যাসের লাইনে পানি ঢুকে চাপ কমে যায়। নিজ উদ্যোগে বারবার ত্রুটি ঠিক করেন এলাকাবাসী। এবারও এভাবেই পাইপলাইন সারাতে গিয়েই বিস্ফোরণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যরাতে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের আইসিইউর পাশের নির্জন করিডরে সুইডেন প্রবাসী বোনকে ভিডিও কলে মা-ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানাতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন রফিক। বিদেশের মাটিতে বসে মায়ের চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না তার বোনও।
অন্যদিকে আয়শা বেগমের আহাজারিতে ভারী শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের আইসিইউর পাশের করিডোর। স্বামী সুমনের মৃত্যুতে দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় আয়শার চোখেমুখে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছায়া। রাজধানীর মিরপুরে গ্যাসলাইনে লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ বাকিরাও শঙ্কামুক্ত নন ।
পরিবারটির ওপর অগ্নিকাণ্ডের এত বড় আঘাত যেন মানতে পারছেন না বাকি সদস্যরা। এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে তাদের। তারা বলছেন, এত বড় একটা হাসপাতালে আইসিইউ ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র একজন নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয়। রোগী ভর্তি হওয়ার পর কোনো ডাক্তারকে সেখানে দেখেনি তারা।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, যেহেতু অধিকাংশ রোগীর দগ্ধের পরিমাণ পার্সেন্টিজ হিসেবে বেশি এবং একই সঙ্গে শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে এ জন্য আমরা সবাইকে আশঙ্কাজনকই বলছি।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় গ্যাসলাইনের সমস্যা নতুন নয়। পাশের বিহারি ক্যাম্পের অবৈধ গ্যাস সংযোগ অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
বাড়ির মালিক জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে মিস্ত্রি আসে গ্যাস সংযোগ মেরামতের জন্য। কাজ শেষে গ্যাসের লিকেজ আছে কি না তা দেখতে দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালালেই বিস্ফোরণ হয়।