জাতীয় ডেস্ক :
রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি) প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ১০ জনসহ অজ্ঞাত ১৫ জনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন দুর্ঘটনায় নিহত আইয়ুব হোসেন রুবেলের চতুর্থ স্ত্রী।
রোববার (২১ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে এ আবেদন করেন রুবেলের স্ত্রী শাহিদা খানম। বিষয়টি সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন রুবেলের ছেলে রুমান।
রুমান বলেন, ‘রোববার সকালে আম্মা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (১৮ নং কোর্ট) মামলার আবেদন করেছেন। চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি) প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ১০ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদেশ পরে দেবেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বিশ্বাস।
মামলায় যাদের আসামি করার আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (আইএফএসসিওএন ইঞ্জিনিয়ারিং) ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশনস আজহারুল ইসলাম মিঠু, চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) প্রকিউরমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম, সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ, ক্রেন চালক আলামিন হোসেন ওরফে হৃদয়, হেলপার রাকিব হোসেন, ইফতেখার হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন তুষার, রুহুল আমীন মৃধা, রুবেল ও আফরোজ মিয়া।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৫ আগস্ট উত্তরা পশ্চিম থানাধীন প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে আশুলিয়াগামী ঢাকা ময়মনসিংহ সেক্টর-৩ এর ৩ নং রোডে প্রাইভেটকারের ওপর বিআরটিএ প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ৫০ টন ওজনের গার্ডার বক্স আছড়ে পড়ে গাড়িতে অবস্থানরত আইয়ুব হোসেন রুবেল ওরফে নুর ইসলাম রুবেলসহ ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ দায়িত্বকালীন হেলথ সেফটি অ্যান্ড ইনভাইরমেন্টের ওপর কোনো জ্ঞান না থাকায় সেফটির জন্য অর্থাৎ ক্রেন চালানোর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার যা যা প্রয়োজন তার যথার্থ পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণ করেননি। চরম অবহেলা এবং খামখেয়ালীপনা করে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, ফলশ্রুতিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্রেনচালক আলামিন নিজে দায়িত্ব পালন না করে হেলপার রাকিবকে দিয়ে ক্রেন চালানোর দায়িত্ব দিয়ে বেআইনিভাবে কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় আলামিন ও রাকিব মৃত্যু পরিস্থিতি জেনেও কোনোরূপ সহযোগিতা না করেই স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যান।
আসামিদের চরম অবহেলা, গাফিলতি এবং অদক্ষ, অযোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের কারণে পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
গত ১৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর উত্তরার জসীম উদ্দীন রোডে বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার ক্রেন উল্টে প্রাইভেটকারে পড়লে শিশুসহ ৫ যাত্রী নিহত হন। এরা হলেন- মো. রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), জান্নাত (৬), জাকিয়া (২) এবং ফাইজ। তবে ভাগ্যক্রম বেঁচে যান নববিবাহিত দম্পতি হৃদয় ও রিয়া। ওই দিন দিবাগত রাতেই নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্ণা আক্তারের ভাই আফরান মণ্ডল বাবু উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটায় ক্রেনের চালক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তারা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছেন।
এ দুর্ঘটনার পর রুবেলের ৭ বিয়ের বিষয়টি সামনে আসে। সেদিন ৫ জন স্ত্রীই শেষবারের মতো দেখতে আসেন রুবেলের মরদেহ। তখনই জানা যায়, তার ৭ স্ত্রীর খবর।