হোম আন্তর্জাতিক গাজা-ইউক্রেন ইস্যুতে হঠাৎ নীরব কেন ট্রাম্প?

গাজা-ইউক্রেন ইস্যুতে হঠাৎ নীরব কেন ট্রাম্প?

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 62 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

হোয়াইট হাউজের হাল ডোনাল্ড ট্রাম্প ধরার পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা আপাতদৃষ্টিতে অগোছালো মনে হচ্ছে। প্রথম দিকে ক্ষমতায় এসেই গাজা ও ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে আদাজল খেয়ে মাঠে নামলেন ট্রাম্প, পরে ইসরায়েলের সমর্থনে ইরানে বোমা হামলার নির্দেশ দিলেন, পাকিস্তান-ভারতের মতো একাধিক দ্বিপাক্ষিক বিরোধে মধ্যস্থতা করালেন। সেই একই ব্যক্তিই আবার ইউরোপকে বলে আসছেন, তারা যেন নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতার ওপর আর নির্ভর করে না থাকে।

কখনও চালকের আসন আবার কখনও আরোহী, ট্রাম্পের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি আপাতত এভাবেই চলছে।

গত আগস্টের শেষের দিকে ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে পেন্টাগনের কর্মকর্তারা স্পষ্ট বলে দেন যে, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়ার মতো রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ন্যাটো সদস্যদের জন্য কিছু নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

পেন্টাগনের কর্মকর্তা ডেভিড বেকার বৈঠকে জানান, ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কম নির্ভরশীল হতে হবে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসনে নিজস্ব ভূখণ্ড রক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির এই আপাত পরিবর্তনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ইউরোপীয় কূটনীতিবিদরা। তাদের আশঙ্কা, এতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন। শুক্রবারে ন্যাটো সদস্যদের আকাশসীমার রুশ যুদ্ধবিমানের উপস্থিতির অভিযোগ যেন সেই আশঙ্কারই প্রতিফলন ঘটালো।

এস্তোনিয়ার অভিযোগ, রাশিয়ার মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান প্রায় ১০ মিনিট তাদের আকাশসীমায় চক্কর কেটেছে। পরে ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তাড়ায় তারা সটকে পড়ে।

স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে মস্কো দাবি করেছে, তাদের যুদ্ধবিমান আন্তর্জাতিক জলসীমানার ওপর দিয়ে উড়েছিল। এর ঘণ্টাখানেক পর রাশিয়ার বিমান একটি পোলিশ তেল প্ল্যাটফর্মকে ঘিরে উড়ে যায়। গত সপ্তাহে পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছিল।

সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় মার্কিন প্রতিক্রিয়া এখনও সীমিত। কয়েক ঘণ্টা চুপ থাকার পর ট্রাম্প মন্তব্য করেন, এগুলো ‘বড় সমস্যা’ হতে পারে।

গত সপ্তাহে পোল্যান্ডের ঘটনার পর তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, এই শুরু হলো! (হিয়ার উই গো!)
বিশ্বের একাধিক জটিল দ্বন্দ্বে কয়েক মাস সক্রিয় ভূমিকা রাখার পর আপাতত যেন একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন ট্রাম্প। এর বদলে তিনি মিত্রদের সামনে রেখেছেন দূর থেকে মার্কিন সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন কেবল। এখন তিনি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন অপরাধ দমন, কথিত সহিংস বামপন্থী চরমপন্থার মোকাবিলা, অভিবাসনের মতো অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে।

গ্রীষ্মে পুতিনকে আলাস্কায় আতিথেয়তা দেওয়ার পর ইউরোপীয়দের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, তাদের তরফ থেকে রাশিয়ার তেল ক্রেতাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও মস্কোর বিরুদ্ধে আর্থিক চাপ বাড়াবে না।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধেও ট্রাম্পের অবস্থান বদলেছে। শুরুতে তিনি যুদ্ধবিরতি নিয়ে হুমকিধামকি দিয়ে সবাইকে তটস্থ করে রাখলেও, এখন ইসরায়েলের নতুন বিতর্কিত পদক্ষেপগুলোতে নীরব থেকেছেন, যা শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করছে ইউরোপ ও আরব মিত্ররা।

ট্রাম্পের এ সতর্ক অবস্থান অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। গতবছর নির্বাচনি প্রচারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেছিলেন, তাদের বাহিনী বিশ্বে অতিরিক্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে গ্রীষ্মে তিনি ভিন্ন রূপে সামনে আসেন। তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আদেশ দেন, ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর ইঙ্গিত করেন, এমনকি মস্কোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক শুল্কের হুমকিও দেন।

তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, এখন তিনি আবার তার পুরোনো অবস্থানে ফিরে যাচ্ছেন। অভিজ্ঞ কূটনীতিক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, প্রত্যাশিত ফলের নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখার আগ পর্যন্ত ট্রাম্প রাজনৈতিক মূলধন খরচ করতে রাজি নন।

এদিকে, ট্রাম্পের ক্রমাগত ‘মুড সুইং’এর সঙ্গে তারল রাখতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপীয়রা। জুনে ন্যাটো সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতাদের প্রশংসা করে তিনি জুলাইতে রাশিয়াকে সরাসরি ও পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি জানান, ইউক্রেনে শান্তিপ্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসেবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির যে দাবি করা হচ্ছে, তা পুতিনের অবস্থান, ইউরোপীয়দের নয়।

কেউ কেউ মনে করেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার হঠাৎ কড়া অবস্থান আবার নিলে, ট্রাম্পের অবস্থা হবে রাখালবালকের মতো, অর্থাৎ তার বিশ্বাসযোগ্যতা খুব একটা থাকবে না।

সেপ্টেম্বরে এক ফোন কলে ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, তারা এখনও রাশিয়ার জ্বালানি কিনে পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অর্থায়ন করে যাচ্ছে অথচ একই সময় মার্কিন সহায়তা প্রত্যাশা করছে। এর পর তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেন, রাশিয়ার তেল কেনার জন্য চীন ও ভারতের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করতে হবে।

কিছু কূটনীতিক মনে করছেন, ট্রাম্প আসলে ইউরোপকে এক ধরনের ফাঁদে ফেলছেন। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া ধীর এবং তারা মূলত শুল্কের চেয়ে নিষেধাজ্ঞাকে প্রাধান্য দেয়।

এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় ট্রাম্পের অবস্থান বদলাবে কি না, তা অনিশ্চিত। নিরাপত্তা সহায়তা কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তার কাছে চিঠি পাঠয়েছিল বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো। তবে, ওভাল অফিসের পাঞ্জেরির মন তাতে টলেনি।

হোয়াইট হাউজের সাফ কথা, আমাদের ইউরোপীয় মিত্ররা বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কাতারে রয়েছে। তারা চাইলে নিজেরাই এসব কর্মসূচির ব্যয় বহনে সক্ষম।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন