আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোট দেবে। ওই প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পর, এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদে এই খসড়া প্রস্তাব বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গৃহীত হবে বলে আশা করছেন কূটনীতিকরা। যদিও ইসরায়েল এই প্রস্তাবকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ফলপ্রসূহীন প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়ে দেশগুলোকে এতে অংশ না নিতে চাপ দিয়ে আসছে।
সাধারণ পরিষদে ভোটের জন্য উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
এতে বাধাহীন ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের ক্ষুধার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং মানবিক সহায়তার অবৈধ বাধা প্রদান ও তাদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য জিনিস থেকে বঞ্চিত করা-যার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য সরবরাহ ও প্রবেশে বাধা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত—এই কাজগুলোকে কঠোরভাবে নিন্দা করা হচ্ছে।’
সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবগুলো বাধ্যতামূলক না হলেও, সেগুলো একটি বৈশ্বিক অবস্থান প্রতিফলিত করে। এর আগে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে সাধারণ পরিষদের দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের মতো এখানে কোনও দেশের ভেটোর অধিকার নেই।
এই ভোটটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ একটি সম্মেলন আয়োজন করছে- যার লক্ষ্য হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে পুনরুজ্জীবিত করা। এই সম্মেলনে দেশগুলোকে অংশ না নিতে অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, ‘যেসব দেশ ইসরায়েলবিরোধী পদক্ষেপ নেবে, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করছে বলে বিবেচনা করা হবে এবং তারা কূটনৈতিক পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে।’
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেয়, যেখানে ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ এবং গাজায় বাধাহীন মানবিক সহায়তার দাবি করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল, এই প্রস্তাব যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বাকি ১৪টি সদস্য দেশ খসড়া প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছিল। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং গত মাসে ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ প্রত্যাহার করার পরও সেখানে সামান্য পরিমাণ সাহায্য পৌঁছেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সাধারণ পরিষদ গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। ওই প্রস্তাবে ১২০টি দেশ ভোট দেয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১৫৩টি দেশ মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিতে ভোট দেয়। পরে ডিসেম্বরে ১৫৮টি দেশের ভোটে তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক।