রাজনীতি ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া আওয়ামী লীগ কোনোদিন সরকার গঠন করেনি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই সবকিছুর সংস্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল গণভবন থেকে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী একযোগে ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫৩৯৭টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে গৃহপ্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পর রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে মিলিটারি ডিকটেটর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেন। দেশে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ বন্ধ করেছিলেন জিয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু মানবতাবিরোধীদের বিচারকাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ওইসব হত্যাকারী, গণহত্যাকারী, আটক, অপহরণকারী, নির্যাতন, লুটপাটকারীদের জেল থেকে মুক্ত দেন জিয়া। আবার যারা বাংলাদেশ চায়নি পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল, তাদেরকেও ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে যে বাংলাদেশে ভোট নিয়ে খেলা; তার সময়ে (জিয়া) হ্যাঁ-না ভোটের ইতিহাস; সেখানে আর না বক্সে ভোট পড়েনি। সেনা আইন লঙ্ঘন করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে আবার নির্বাচন করেন তিনি। সেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১০০ ভাগের উপরে ভোট নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা; বৈধ করার চেষ্টা করে এবং ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেন। ভোটচুরির কালচার, ভোট ডাকাতির কালচার শুরু করেন জিয়া। জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে নেয়। সংসদ তৈরি করে। আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের উচ্চ আদালতকে। অবৈধ ক্ষমতা দখলদারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই না একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আরেকটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে; এর বাইরে কেউ সরকারে আসতে পারবে না। আসলে সাজা হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া আওয়ামী লীগ কোনোদিন সরকার গঠন করেনি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই সবকিছুর সংস্কার করা হয়েছে বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারাদেশে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী একযোগে ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫৩৯৭টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে গৃহপ্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও দেশে নতুন করে আরও ১১টি জেলা ও ৬০ উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী, দেশে মোট গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলা ৩২ ও উপজেলা ৩৯৪
আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ১৫-তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়, কক্সবাজারস্থ ১০তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্র্রেনিং সেন্টার এবং ৪টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই)’র নবনির্মিত মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়গুলোতে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নতুন ও আকর্ষণীয় শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণের সুবিধা পাবে। এছাড়া, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন নবনির্মিত এ বিদ্যালয়সমূহের সুবিধা পাবেন; নবনির্মিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জেন্ডারের ভিত্তিতে পৃথক ওয়াশ ব্লক নির্মিত হয়েছে এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে মাঠপর্যায়ে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। বেইজমেন্ট ও ক্যাম্পাসে ৪৪টি গাড়ি রাখার সুবিধা রয়েছে।
প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারস্থ ১০তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্র্রেনিং সেন্টারে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের সকল স্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের জন্য চাহিদাভিত্তিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ভবনে ১৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর (৮০জন পুরুষ ও ৮০ জন নারী) আবাসনের সুব্যবস্থাসহ প্রশিক্ষণের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও যশোরে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি পিটিআই এ মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৫০ আসন বিশিষ্ট প্রতিটি অডিটোরিয়ামে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণসহ শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রত্যেক পিটিআই এ প্রতি বছর ২ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়াও, সেখানে বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়।