শিক্ষা ডেস্ক:
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের নাম কটকা ট্রাজেডি। ২০০৪ সালের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন মেধাবী শিক্ষার্থী সুন্দরবনের কটকা সি বিচে বেড়ানোর সময় ভাটার টানে সাগরে হারিয়ে যায়। স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেকে বেঁচে ফিরে এলেও ফিরতে পারেনি ১১ জন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন হলেন- তৌহিদুল এনাম (অপু), আব্দুল্লা -হেল বাকী, মো. মাহমুদুর রহমান (রাসেল), কাজী মুয়ীদ ওয়ালি (কুশল), মো. আশরাফুজ্জামান (তোহা), আরনাজ রিফাত (রুপা), মাকসুমমুল আজিজ মোস্তানী (নিপুণ), মোহাম্মদ কাউছার আহমেদ খান, মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব (শুভ) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২ জন- শামসুল আরেফিন শাকিল ও সামিউল হাসান খান। তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়, যা কটকা স্মৃতিস্তম্ভ নামে পরিচিত। এছাড়া ১৩ ই মার্চ দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানাযায়, ২০০৪ সালের ১২ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৭৮ জন ছাত্রছাত্রী এবং তাদের ২০ জন অতিথি লঞ্চে করে খুলনা থেকে রওনা দেয় সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে। ১৩ মার্চ সকালে তারা সুন্দরবনের নিকটবর্তী বাদামতলীতে পৌঁছায়। সেখান থেকে বেলা একটার দিকে গভীর অরণ্য পেরিয়ে কটকা সমুদ্র সৈকতে লঞ্চ নোঙর করে। দল বেঁধে সবাই নেমে পড়ে নোনা পানিতে।
হঠাৎ আর্তচিৎকার। কলরব থেমে যায়। ভয়ের শীতল স্রোত যেন সবার মেরুদণ্ড বেয়ে নামতে থাকে। হঠাৎ ৩-৪ জন তীব্র স্বরে চিৎকার করে ওঠে, ‘বাঁচাও-বাঁচাও’। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বুঝতে পারে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ভাটার তীব্র স্রোতের কবলে পড়েছে। নিকটে থাকা কয়েকজন দ্রুত ছুটে যায় উদ্ধারে। আর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকাদের চোখে তখন অসহায় দৃষ্টি। এসময় কয়েকজনকে উদ্ধার সম্ভব হলেও ভেসে যায় অনেকে। যারা বেঁচে ফিরে এসেছে তারা বালুর উপর বসে হাঁপাচ্ছে আর বমি করছে। অক্সিজেনের অভাবে তাদের শরীর নীল হয়ে গেছে।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থী রুপা ও কাউসার ততক্ষণে আর নেই। চোখের সামনে এমন করুণ দৃশ্য দেখে কেউ নির্বাক হয়ে যায়, কেউ করতে থাকে আহাজারি, জ্ঞানও হারায় কেউ কেউ। ভেসে যাওয়া মানুষগুলোকেও তখন আর দেখা যাচ্ছে না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীরা কাউসার আর রূপার মরদেহ লঞ্চে নিয়ে আসে। লঞ্চে এসে সবার নাম ধরে ডাকলে বোঝা যায় ভয়ংকর সাগরে সমাধি হয়েছে ৯ জনের। এক বুক দুঃখ আর চোখ ভরা পানি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে খুলনায়।
সেই থেকে প্রতিবছর ১৩ ই মার্চ দিনটি শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্মসূচির মধ্যে সকালে রয়েছে কালোব্যাজ ধারণ, শোকর্যালী, পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্মৃতিচারণ। এবং বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও সন্ধ্যায় এতিমদের সাথে ইফতার ও নৈশভোজ।
এসব কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), বিভিন্ন ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট ও বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।