অনলাইন ডেস্ক:
বাগেরহাটের হযরত খানজাহান (রহ.) আলী মাজারের দীঘিতে মারা যাওয়া কুমিরের ময়নাতদন্ত শেষে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) গভীর রাতে মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলীর নেতৃত্বে দীঘির প্রধান ঘাট এলাকায় কুমিরটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়। একইদিন সন্ধ্যায় কুমিরটি মারা যায়।
এর আগে খুলনা প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. লুৎফর রহমানের তত্বাবধায়নে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় কুমিরটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে তিন মাসের মত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ডা. লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, ‘কুমিরটির শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিল না। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কুমিরের দেহের প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেতে আনুমানিক দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। তখন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
ডা. মো. লুৎফর রহমান আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জুন এই কুমিরটি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তখন পানির ওপরে শুকনো জায়গায় দুই সপ্তাহ রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। কুমিরটির মাথা ও চোখে কিছু সমস্যা ছিল। আমরা তখন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছিলাম। তারপর বেশ সুস্থ হয়ে ওঠে।’
প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, ‘কুমিরটিকে ঘাটের পাশে মাটি দেয়া দিয়েছি। কুমিরের মৃত্যুতে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। এই দীঘির অন্যতম ঐতিহ্য মিঠা পানির কুমির। এই দীঘিতে বর্তমানে একটি নারী কুমির রয়েছে। এই কুমিরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসন ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাই।’
সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ‘খলিফতাবাদ’ নগর বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি এই অঞ্চলে ৩৬০টি দিঘী খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দিঘি’। যে দিঘীর পাড়ে তার সমাধি রয়েছে। এই দিঘীতে তিনি মিঠাপানির প্রজাতির দুটি কুমির ছেড়ে ছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহান (রহ) এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশধররা এখানে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় মারা যাওয়ার কারণে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের বংশধরের ধারাবাহিকতা শঙ্কায় পড়ে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে দিঘির কুমির ‘কালাপাহাড়’ এবং ২০১৫ সালে ‘ধলাপাহাড়’ মারা যায়। ধলাপাহাড়ের চামড়া বাগেরহাট জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
এরমাঝে মাজারে কুমিরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোটাইল ব্যাংক থেকে ৬টি কুমির এনে মাজারের দিঘিতে ছাড়া হয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে দুটি কুমির মারা যায়। দুটি কুমির সুন্দরবনের করমজলে পাঠানো হয়। অবশিষ্ট দুটি কুমির এতদিন এই মাজারে ছিল। এদের মধ্যে নারী কুমিরটি কয়েকবার ডিম পাড়লেও, কোনো বাচ্চা হয়নি। সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পুরুষ কুমিরটির মরদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে কুমিরটিকে ওপরে তোলা হয়। পুরুষ কুমিরটি অস্বাভাবিক মৃত্যুতে নারী কুমিরটি সঙ্গী হারা হয়ে পড়ল।