হোম আন্তর্জাতিক খাদ্য নেই বিদ্যুৎ নেই, দিশেহারা গাজাবাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকায় ২৩ লাখ মানুষের বাস। পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে পরিচিত এ ভূখণ্ডের মানুষগুলোর প্রতিটি মুহূর্ত এখন কাটছে সীমাহীন ভয়-আতঙ্কে।

মাথার ওপর আকাশে ঘুরছে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান। অবিরাম পড়ছে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র। তাতে মুহূর্তে উড়ে যাচ্ছে ঘারবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মসজিদ। বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

খাদ্য নেই, নেই পানি। চলে গেছে বিদ্যুতও। ফলে গাজার অবস্থা পঙ্গু প্রায়। হাসপাতালগুলো আহত মানুষে ভরপুর। স্রোতের মতো আসছে আহত মানুষ। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী ফুরিয়ে আসছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অভিযানের প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকাকে টার্গেট বানিয়েছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ষষ্ঠ দিনেও ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। সারাদিনে অন্তত ১৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর ফলে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১৭ জনে।

ইসরাইলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে দিগ্বিদিক পালাচ্ছে গাজাবাসী। কিন্তু আসলে তাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই। পুরো গাজা উপত্যকা ইসরাইলের দেয়া উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।

সীমান্তের চেকপয়েন্টগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল ও মিশর। ফলে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। দাঁড়িয়ে মরাই যেন তাদের নিয়তি।

গাজা উপত্যকার বাসিন্দা আয়েশা আবু দাক্কা। ইসরাইলের বিমান হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আপনি দূর থেকেও শব্দ শুনতে পাবেন। এবং তারপর আপনি অনুভব করবেন, ঘর কাঁপছে। তখন আমাদের আমরা যা করতে পারি তা হলো অপেক্ষা করা ও আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।’

গাজার আরেক বাসিন্দা মাজেন মোহাম্মদ (৩৮) গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিলেন, তার পরিবার কোনো রকমে এক জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে রাত কাটায়। তিনি আরও বলেন, ‘মনে হয়, আমরা যেন এক ভূতুড়ে শহরে বাস করছি। আর শুধুমাত্র আমরাই যেন বেঁচে আছি।’

গাজার জনগনের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ইসরাইল পানি, খাদ্য ও জ্বালানী সরবরাহ ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। ইসরাইল সরকার বলেছে, হামাস সদস্যরা যেসব ব্যক্তিকে বন্দী করেছে, তাদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ করা হবে না।

গাজার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী জানিয়েছে, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাসিন্দারা তাদের ফোন চার্জ করার জন্য গাড়ির ব্যাটারি ব্যবহার করছেন। এদিকে খাদ্য মজুতও দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এলাকার একমাত্র কসাইখানাও বন্ধ হয়ে গেছে। সীমান্তের কাছেও সবজির সরবরাহও কম।

এক কথায়, ইসরাইলের অব্যাহত হামলা ও অবরোধের মুখে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে গাজাবাসী। বিদ্যুতের অভাবে গাজাবাসীকে এখন শুধু জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উপত্যকাটির হাসপাতালগুলোর জেনারেটরগুলোর জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে। এএফপি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন