দেবহাটা প্রতিনিধি :
দেবহাটার বহুল আলোচিত খলিশাখালীতে ভূমিদস্যুদের জবরদখলকৃত ১৩২০ বিঘা জমি এবং প্রায় তিন কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্রমশ সেখানকার ভূমিদস্যু বাহিনী গুলোর মধ্যে আন্ত:কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে খলিশাখালিতে স্থানীয় একাধিক ভূমিদস্যু বাহিনী সহ অবস্থান করছে অন্তত হাফ ডজন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর কয়েকশ ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন খলিশাখালীর ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদে উচ্ছেদাভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে সেখানকার প্রায় তিন কোটি টাকা ও সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। এসমস্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে বর্তমানে খলিশাখালীর শীর্ষ ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী আনারুল বাহিনীর টার্গেটে পরিনত হয়েছে ভূমিদস্যু অধ্যুসিত ওই জনপদের অন্যতম নেতা রবিউল ও তার সমর্থকরা। রবিউলকে সেখান থেকে সরাতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছে আনারুল বাহিনী ও তাদের অনূসারীরা। রবিউলের ওপর হামলা ও তাকে হত্যা বা গুমের পরিকল্পনাও আঁটছে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী আনারুল বাহিনী।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে স্থানীয় ইছাদ আলীর ছেলে ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুলের নেতৃত্বে মুহুর্মুহু বোমা ও গুলিবর্ষন করে আতঙ্ক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া মৌজার ৩০টি খন্ডে বিভক্ত খলিশাখালী নামক ব্যাক্তি মালিকানাধীন ওই ৪৩৯.২০ একর (১৩২০ বিঘা) সম্পত্তির মৎস্য ঘের জোরপূর্বক দখল করে নেয় কয়েকশ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। জবরদখল পরবর্তী বিস্তৃর্ণ ওইসব মৎস্যঘের থেকে তাৎক্ষনিক কোটি টাকার বাগদা চিংড়ীসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও ঘেরের বাসায় থাকা আসবাবপত্র, গবাদিপশু লুট করে নেয় জবর দখলকারীরা। তাছাড়া বিগত পাঁচমাসে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জবরদখলকৃত ১৩২০ বিঘা জমিতে কথিত ভূমিহীন পূণর্বাসনের নামে শতশত ভূমিদস্যুদের কাছে জমি বেচাকেনা ও হাতবদল করে আরও অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সেখানকার মুল নেতৃত্বে থাকা ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুল।
একের পর এক সেখানে গড়ে তোলে কমপক্ষে হাফ ডজন ভূমিদস্যু ও অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর অভয়ারণ্য। আর এসব সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং পুলিশ-প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ম্যানেজ করতে আনারুল বাহিনীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদের মদদদাতা কিছু জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও জেলা-উপজেলার ভুইফোঁড় কিছু মিডিয়ার কয়েকজন কথিত সাংবাদিক। বহাল তবিয়তে খলিশাখালীর জবরদখলীয় বিস্তৃর্ণ সম্পত্তি, বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ ও গোটা জনপদের নিয়ন্ত্রন আঁকড়ে রাখতে আনারুল তার এসব অপকর্মে সঙ্গী করে নেয় খলিশাখালীর শাহজাহান গাজীর ছেলে রবিউলকে।
আনারুল নিজে সভাপতি ও রবিউলকে সম্পাদক করে খলিশাখালীতে গড়ে তোলে কথিত ভূমিহীন কমিটি। নামে ভূমিহীন কমিটি হলেও, রবিউলকে কাঠের পুতুল বানিয়ে কথিত এ কমিটির মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে রাতারাতি সদস্য বানিয়ে রেকর্ডিয় মালিকদের কাছ থেকে জবরদখলকৃত খলিশাখালীর জমি বিঘাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রত্যেক সদস্যের কাছে বিক্রি শুরু করে ভূমিদস্যু আনারুল। পাশাপাশি দখলদারিত্ব বজায় রাখতে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১০ হাজার টাকা হারে চাঁদাও নেয় সে। সবমিলিয়ে জবরদখলকৃত শতশত বিঘা মৎস্য ঘের থেকে লুন্ঠিত মাছসহ অন্যান্য সম্পদ ও জমি বিক্রিসহ বহাল তবিয়তে চাঁদাবাজি করে খলিশাখালী থেকে এপর্যন্ত প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুল।
বিপুল পরিমান এ অবৈধ অর্থ এবং জমির ভাগবাটোয়ারা ও হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ভূমিদস্যু আনারুল গ্রুপের সাথে রবিউল ও তার লোকজনের গোলযোগ বেঁধেছে। মঙ্গলবার (৮মার্চ) খলিশাখালীতে এনিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আনারুল ও রবিউল গ্রুপের লোকজন। সেসময় প্রায় ঘন্টাব্যাপী দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এতে রবিউল গ্রুপের অন্তত পাঁচজন গুরুতর আহত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনারুল বাহিনীর কয়েকজন আরোও জানায়, ওই সংঘর্ষের ঘটনার পরও অদ্যবধি আনারুল বাহিনীর কাছে জবরদখলকৃত জমি ও সেখান থেকে আদায়কৃত তিন কোটি টাকার হিসাব চাওয়ায় রবিউলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা, হত্যা বা গুম করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ভূমিদস্যু আনারুল, অপর বাহিনী প্রধান ইন্দ্রনগরের শাহিনুর, আটশত বিঘার আসাদুল, তাদের অনুসারী খলিশাখালীর বাবলু, আব্বাস, রায়হান, নূর আলী, আল-আমিন সহ অন্যান্য ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। বাহিনী প্রধান আনারুল সহ তাদের অনুসারী এসব সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের মূল টার্গেটে পরিনত হওয়ায় যেকোন মুহুর্তে রবিউলের ওপর হামলার আশঙ্কাও করছেন তারা।
এদিকে এবিষয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ও তার প্রতিপক্ষ আনারুল বাহিনীর বক্তব্য নিতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও, তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে খলিশাখালিতে সংঘর্ষ এড়াতে প্রতিনিয়ত সেখানে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের ওপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি রয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে জানা গেছে।