যশোর অফিস :
নারী প্রভাষকের সাথে অশ্লীল আচারণসহ নানা অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া বাঘারপাড়ার খবির উর রহমান কলেজের অধ্যক্ষের সাথে একই প্রতিষ্ঠানের এক নারী প্রভাষকের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যা এখন কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীতের ফোনে ফোনে। সা¤প্রতি বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। যদিও অধ্যক্ষ বলছেন, এটা তার বিরুদ্ধে একটি মহলের ষড়যন্ত্র। এদিকে, কলেজের সাধারণ শিক্ষকদের দাবি, কল রেকর্ডিং এ তিনি যে আসলেই বিভিন্ন সময় নারী প্রভাষকদের যৌন হয়রানী করতেন তার প্রমান উঠে এসেছে। এটাকে ভিন্ন খ্যাতে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তারা জানান, অধ্যক্ষ নারী প্রভাষকের সাথে কথাবার্তার এক পর্যায় তাকে বলেন, আপনি আমাকে এনার্জি দেননা। হাত ছুতে চাইলে সরিয়ে নেন। এটা কেন করেন। আপনি কি ফিডার খান। আপনি কি বোঝেন না আমি কি চাই। আমি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, আমার কথামত আপনাকে চলতে হবে এটায় বাস্তবতা। ফলে আমাকে বরং আপনি উৎসহ দেবেন অথচ আপনি শুধু আমাকে কষ্ট দেন। শিক্ষকদের দাবী কথপোকথনে আরো বেশ কিছু অশালীন কথাবার্তা উঠে আসে ফাঁস হওয়া ফোন রেকর্ডে। ওই নারী প্রভাষকের মা মারত্মক অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে গ্রামের বাড়ি দেখতে যাওয়ার জন্য তিনি কলেজ অধ্যক্ষর কাছে দুইদিনের ছুটির প্রার্থনা জানান। অধ্যক্ষর মনমত ওই নারী প্রভাষক না চলায় অধ্যক্ষ ছুটি না মঞ্জুর করেন।
পরে রাতে মায়ের অবস্থার অবনতি হলে ওই প্রভাষক রাতে ফের মোবাইল ফোনে অধ্যক্ষের কাছে ছুটির আকুতি জানান। প্রতি উত্তরে অধ্যক্ষ বলেন আপনার মা অসুস্থ্য, নাকি ছেলে পক্ষ আপনাকে দেখতে আসবে। সত্যি করে বলেন। আপনি আমাকে খুশি করেন না তবে আপি আপনার কথা কেন শুনবো। আপনার তো আমার প্রয়োজন নেই, তবে এখন ছুটি চাচ্ছেন কেনো। এসব কথা আমি শুনতে চাইনা। আপনার কাছে আর ওই সব রিপিট করবোনা। কাল কলেজে আমার রুমে আসুন কথা বলবো। এবার ওই প্রভাষক দুইদিনের পরিবর্তে একদিনের ছুটি আকুতি জানায়। অধ্যক্ষের মনমত চলা ও নিয়মিত তার কক্ষে যাবার সর্তে তিনি একদিনের ছুটি মঞ্জুর করেন। তবে তিনি আরেক প্রভাষক প‚র্নীমা সহ আরো দুই প্রভাষকের নাম উলেখ করে বলেন তারা আমার রুমে আসে, বসে, কথা বলে। আপনি দেখেন না। তাহলে আপনি কেন আসেন না। আপনি যদি সম্পর্ক না রাখেন তাহলে কিন্তু আপনি নিজেই বিপদে পরবেন।
এদিকে, কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের অভিযোগ এরপরেই ওই প্রভাষক কলেজে আসলে তাকে অধ্যক্ষ নিজের রুমে ডেকে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করেন। চরিত্র হরণের চেষ্টা চালান। পরে ওই প্রভাষক শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি জানান। পরে সকল শিক্ষক একট্টা হয়ে প্রথমে সভাপতি, পরে এমপি রনজিত রায়ের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। তার অনুলিপি উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, কলেজ পরিদর্শক, জেলা প্রশাসক ও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর ৩০ কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে ২৭জনের স্বাক্ষর সহ জমাদেন। এ ঘটনা সহ আরো একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট কলেজ কমিটির সভায় অধ্যক্ষ শামসুর রহমানকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। একই সাথে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, অপর একটি স‚ত্র জানায়, বিষয়টি প্রথমে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে জানাজানি হয়। পরে এ নিয়ে অধ্যক্ষ ওই নারী প্রভাষককে শোকজ করে। এর বিপরীতে নারী প্রভাষক সন্তোষজনক জবাবও দেয়। কিন্তু তারপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালায় অধ্যক্ষ শামসুর। কিন্তু তা এখন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তোভোগী প্রভাষক বলেন, একজন নারী প্রভাষক হয়ে অধ্যক্ষের নিকট তিনি যে ধরণের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। তিনি এ ঘটনার শাস্তি দাবী জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ শামসুর রহমান বলেন, এটা ষড়যন্ত্র। তার সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে গত বছর। এরপর আর কখনোই কথা হয়নি। তাহলে এখন এসব কেন সামনে আসবে। তা ছাড়া তার সাথে অশোভন কোনো কথাও হয়নি তার।
মুলত ওই নারী প্রভাষকের সাথে আরেক পুরুষ প্রভাষকের অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো। যার প্রতিবাদ করায় তার প্রতি ষড়যন্ত্র চলছে। এছাড়াও তিনি বলেন সভাপতি নুর মোহাম্মদ পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে জমি কিনেছেন। ভাই চেয়ারম্যান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ সাহস পায়না। এছাড়া প‚র্নিমা রানী নামের একজন শিক্ষককে তিনি বহিস্কারের জন্য উঠে পরে লেগেছিলেন। নাইট গার্ড ও তার বারার উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে তারা। এতোসব অনিয়ম তিনি অধ্যক্ষ হয়ে সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ডিসি মহাদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। যা তদন্ত করে প্রমানিত হয়েছে। তারই স‚ত্র ধরে সহ একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।
এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নুর মোহাম্মদ পাটোয়ারী বলেন, অধ্যক্ষ বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। একই সাথে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, ছাতিয়ানতলা কলেজের অধ্যক্ষ ও মির্জাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বিষয়টি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন। তদন্তধীন বিষয়ে তিনি আর কিছুই বলতে রাজি নয় বলে জানান মি. নুর মোহাম্মদ পাটোয়ারী। উলেখ্য, বাঘারপাড়ার খবির উর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরেই দন্দ্ব চলে আসছে। বিভিন্ন মাধ্যমে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ছোড়াছুরি চলছে। হচ্ছে মামলা পাল্টা মামলা। তবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি এভাবে চলতে থাকলে খুব শিঘ্রই এ কলেজের সুনাম ভেস্তে যাবে। শিক্ষার্থীরাও এ কলেজে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। দ্রতই কলেজে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে জোড় দাবি জানান সবাই।