হোম ফিচার ক্লিনিকের অপচিকিৎসায় অথর্ব গৃহবধু ঝুমা বেগমের বাচার আকুতি

নড়াইল অফিস :

নড়াইলের ইমন ক্লিনিকে সিজার করতে এসে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিকের অব্যস্থাপনায় মরতে বসেছি। গত দেড়বছর ধরে আমি অতি কষ্টে জিবন যাপন করছি, আমি আর মা হতে পারবো না। এমনকি আমার নবজাতককে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াতেও পারি না। আমি এখন এক অথর্ব নারী, আমার ভবিষ্যৎ জিবন কিভাবে কাটবে তাও জানিনা।

কান্না জড়িত কন্ঠে সংবাদ সম্মেলণে এসব কথা বলেন ৩০ বছরের গৃহবধু ঝুমা বেগম (৩০)। সে সদর উপজেলার হবখালি গ্রামের মাফুজুর রহমানের স্ত্রী।

বুধবার (২৩ মার্চ) সকাল ১১টায় নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরিতে ঝুমা বেগম পারিবারিক সাংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন। পরে নড়াইল চৌরাস্তায় ইমন ক্লিনিকে ভূল চিকিৎসা স্বীকার কয়েকজন ভুক্তভোগী মানববন্ধন করে।

সাংবাদ সম্মেলনে ঝুমার স্বামী মাফুজুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার স্ত্রীর করুন পরিনতির জন্য দায়ী চিকিৎসক ডা. আকরাম হোসেন এবং শহরের ইমন ক্লিনিক নামের কসাইখানা । ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঝুমা বেগম এর সিজার অপারেশনের পর তলপেটে যন্ত্রনা বাড়তে থাকে। তার তলপেটের সেলাই ফেটে রক্ত এবং প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়। জীবন বাঁচাতে খুলনায় ২য় দফা অপারেশন করে তার জরায়ু ফেলে দেয়া হয়। এরপরও ঝুমা বেগম সুস্থ্য না হওয়ায় পুনরায় খুলনা, ঢাকায় চিকিৎসা চলে একবছর। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে ভারতের কোলকাতার একটি হাসপাতালে আরো দুই দফা অপারেশন হয় ঝুমা বেগমের। ক্লিনিকের চিকিৎসকের একটি ভুল চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রীকে আরো ৩ টি ঝুকিপূর্ন অপারেশন করেও সুস্থ্য করা যায়নি। সে ঠিকমতো বসতে পারে না, শুতে পারে না, নিজ সন্তানকে কোলে তুলে বুকের দুধও খাওয়াতে পারে না। উপরন্ত মানসিক যন্ত্রনায় সবসময়ই ছটফট করে।

এ ব্যাপারে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারী ঝুমা বেমের স্বামী মাহফুজ রহমান বাদি হয়ে ক্লিনিক মালিক, তার স্ত্রী ও চিকিৎসকের নামে নড়াইলের নালিশী আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মাহফুজ নুর দাবী করেন, চিকিৎসার নামে এহেন অপকর্ম করার পরেও নড়াইলের সিভির সার্জন কিম্বা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ভুয়া ক্লিনিক আর অসাধু মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার আদালতে প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপন করেছেন। চিকিৎসক আর ক্লিনিক মালিক সরোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম দ্বারা ম্যানেজ হয়ে ঐ চক্রের পক্ষে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন সিভিল সার্জন। আমার কোন বক্তব্যই নেননি তদন্ত কমিটি।

সংবাদ সম্মেলন শেষে নড়াইল চৌরাস্তায় ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করেন। সেখানে বক্তব্য দেন, শহর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকির হোসনে, ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান মোল্যা, নান্নু মোল্যা প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইমন ক্লিনিকে মা হতে এসে অন্ততঃ ৫০ রোগী চরম ভোগান্তির শিকার। সার্জারী বিশেষজ্ঞ হয়ে গাইনী চিকিৎসা করে ডা. মো. আকরাম হোসেন বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিময় অনুযায়ী বেআইনী কাজ করেছেন।

ভুল চিকিৎসা ও ইমন ক্লিনিকের অব্যবস্থপনার দায়ে ওই ক্লিনিক বন্ধ সহ জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবী করেন।

অভিযোগ বিষয়ে ইমন ক্লিনিক মালিক মো. সরোয়ার বলেন, আমার ক্লিনিক সঠিকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। এখানে আমার কোনো গাফিলাতি ছিলনা। সঠিকভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন