হোম অন্যান্যকৃষিবার্তা ক্রেতার দেখা নেই পারুলিয়া পশু হাটে : চাহিদা ও দাম কম দেশী গরুর, দুঃচিন্তায় খামারীরা

ক্রেতার দেখা নেই পারুলিয়া পশু হাটে : চাহিদা ও দাম কম দেশী গরুর, দুঃচিন্তায় খামারীরা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 74 ভিউজ

দেবহাটা সংবাদদাতা:

ক্রমেই এগিয়ে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। বৈধভাবে আমদানী কার্যক্রম না থাকায় ভারতীয় গরু এবার দখল করতে পারেনি দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কোরবানির পশুর হাট সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া পশু হাটটি। এবছর পশুহাটটি রীতিমতো দেশীয় গরুর দখলে থাকলেও, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে বাইরের বেপারী ও ক্রেতাদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কম থাকায় চাহিদা ও দাম দুই-ই কমেছে দেশী গরুর।

এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে করোনা মহামারীর কারনে মধ্যবিত্তসহ অধিকাংশ মানুষই অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় এবছর স্বল্প বাজেটের মধ্যে কোরবানি সারতে ঝুঁকছেন ছাগল ক্রয়ে।

তাই অন্যান্য বছরের মতো আশানুরুপভাবে এবছর তেমন জমে উঠেছেনা পারুলিয়ার পশু হাটটি। প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আযহাকে ঘিরে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় আর ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে মুখরিত থাকলেও, এবছর তেমন কোন দৃশ্যই চোখে পড়ছেনা পারুলিয়া পশুহাটে। এককথায় এবছর যেন ক্রেতাশুন্য প্রতিবারের জমজমাট এই পশুহাটে।

রবিবার (১২ জুলাই) পারুলিয়া পশু হাটটিতে সরেজমিনে দেখা যায় অন্যান্য বছরের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন এমন ক্রেতাশুন্য দৃশ্য।

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পশু হাটের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে হাট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হলেও, বাইরের জেলা থেকে বেপারী ও ক্রেতারা সাতক্ষীরামুখী না হওয়ায় এখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি পারুলিয়া পশুহাটের কার্যক্রম। পাশাপাশি করোনা সংক্রমন এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অনলাইনে গরু কিনতে মানুষকে উৎসাহিত করায়, রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন পশুহাটের ইজারাদার থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও খামারীরা।

যদিও পশুহাট এবছর দেশী গরুর দখলে, কিন্তু ক্রেতা ও বেপারীদের উপস্থিতি না থাকায় গরুর ও চাহিদা কমার সাথে সাথে ক্রয়-বিক্রয়ও মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর যে কয়েকটি বিক্রয় হচ্ছে তাও ছোট ও মাঝারি সাইজের। ফলে দীর্ঘদিন ধরে লালন পালন ও মোটাতাজাকরণ করলেও, ক্রেতার অনুপস্থিতি এবং চাহিদা ও দাম কম হওয়ায় এবছর বড় গরু নিয়ে হাটে আসছেননা খামারীরাও।

পারুলিয়া পশুহাটের ইজারাদার ও জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব আল ফেরদাউস আলফা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালের সর্ববৃহৎ পশু কেনাবেচার স্থান দেবহাটা উপজেলার এই পারুলিয়া পশু হাটটি। ঈদকে সামনে রেখে অন্যান্য বছর ঠিক এমন সময়ে এ হাটটি ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে ওঠে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ও জেলার বাইরে থেকে খামারিরা তাদের পালিত পশু বিক্রয় করতে আসেন এই হাটে। হাটের পরিবেশ ক্রেতা ও বিক্রেতা বান্ধব এবং সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় ঈদের আগমুহুর্তে এই হাটে উল্লেখযোগ্য হাবে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন ধরনের পশু ক্রয় বিক্রয় হয়।

কিন্তু এবছর পারুলিয়া পশুহাটটি একেবারেই যেন ক্রেতা শুন্য। চলতি বছরের জন্য পশু হাটটি উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে। কিন্তু ইজারা নেয়ার পরপরই করোনা ভাইরাসের কারনে পশুহাটের কার্যক্রম জেলা প্রশাসন বন্ধ করে দেয়ায় চরম লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। পরবর্তীতে হাট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া গেলেও, করোনা ভাইরাসের কারনে একদিকে গরুর চাহিদা ও দাম কমেছে এবং অন্যদিকে জেলার বাইরে থেকে খামারী ও বেপারীরা হাটে না আসায় বেচাকেনা শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

এতে করে এবছর স্থানীয় খামারী ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি হাটের ইজারা নিয়ে তীব্র লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়া করোনা সংক্রমন এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে হাট পরিচালনা করা হচ্ছে। সকলকে সতর্ক করে সার্বক্ষনিক মাইকিং ও জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে বলেও জানান আল ফেরদাউস আলফা।

খামারী ও পশু বিক্রেতারা জানান, পারুলিয়া পশুহাটে এবার দেশী গরু ও ছাগল আসছে। তবে ভারতীয় গরু না আসলেও, চাহিদা কম থাকায় দেশী গরুর দামও কমেছে বলে জানান ক্রেতারা। বর্তমানে পারুলিয়া পশুহাটে ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে এক লক্ষ টাকার মধ্যে গরু পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যেও বেশ কিছু গরু বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে স্বল্প বাজেটে কোরবানির ক্ষেত্রে খাসি ছাগল বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। এবছর ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা দামের ছাগল বেশি বিক্রি হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন