স্পোর্টস ডেস্ক:
চলতি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের ফল এখন ১-১। বৃষ্টিবিঘ্নিত ব্রিসবেনে তৃতীয় টেস্ট ড্র হয়ে গিয়েছে। আগামীকাল (২৬ ডিসেম্বর) থেকে মেলবোর্নে শুরু হবে বক্সিং ডে টেস্ট।
অনেকের মনেই কৌতুহল, এই টেস্টকে কেন বক্সিং ডে টেস্ট বলা হয়? আদৌ কি আছে বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধের সঙ্গে কোনও যোগ আছে? এই প্রতিবেদনে রইলো বক্সিং ডে টেস্টের ইতিহাস থেকে সংস্কৃতি!
বক্সিং ডে কী?
প্রতি বছর বড়দিনের পরের দিন অর্থাত্ ২৬ ডিসেম্বর পালিত হয় বক্সিং ডে। যা সরকারি ছুটির দিন। ব্রিটেন থেকে উদ্ভূত হলেও বহু কমনওয়েলথ দেশে তা রমরমিয়ে পালন করা হয়। বিশেষ দিনে আধুনিক উদযাপনের সঙ্গে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে যোগ করে। বড়দিনে পাওয়া উপহারের বাক্স এদিন খোলা হয়। সেই কারণেও বক্সিং-ডে। বহু দেশে এই দিনে ক্রিস্টমাসে কাজ করা অভাবী মানুষদের হাতে প্রয়োজনীয় জিনিসও দেওয়া হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন এই দিনে দান-ধ্যানে ভরপুর হয় সুখ-সমৃদ্ধি। কারোর কাছে এই দিন কেনাকাটা করার জন্যও শুভ।
আধুনিক সময়ে
আজকের দিনে ‘বক্সিং ডে’ ছুটির দিন হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কমনওয়েলথ দেশগুলোতে এটি শপিং, খেলা এবং বিনোদনের দিন হিসেবে পালিত হয়।
বক্সিং ডে এবং ক্রিকেট
বক্সিং ডে-তে টেস্ট ক্রিকেট খেলে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউ জিল্যান্ড। সবচেয়ে জনপ্রিয় অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক মেলবোর্নে খেলা টেস্ট। বক্সিং ডে টেস্টের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। ১৮৬৫ সালে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে একটি শেফিল্ড শিল্ড ম্যাচ হয়েছিল এই এমসিজি-তে। দেখতে গেলে সেখান থেকেই শুরু। ১৯৫০-৫১ অ্যাশেজ সিরিজের সময়ে মেলবোর্ন টেস্ট ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলা হয়েছিল। চতুর্থ দিনের খেলাটি বক্সিং ডে তে হয়েছিল। তবে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে মেলবোর্নে বক্সিং ডে-তে কোনও টেস্ট ম্যাচ খেলাই হয়নি। কারণ তখন ছ’টি টেস্ট হয়েছিল। ১৯৭৪-৭৫ অ্যাশেজ সিরিজে, সামগ্রিক সময়সূচিতে সব টেস্ট দিতে গিয়ে তৃতীয় টেস্ট মেলবোর্নে বক্সিং ডে তে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
২০১৩ সালের বক্সিং ডে টেস্ট ইতিহাস লিখেছিল। খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। মেলবোর্ন সেবার ৯১ হাজার ১১২ জন দর্শক এসেছিলেন খেলা দেখতে। বক্সিং ডে টেস্টে একাধিক স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। ১৯৮৫ সালে অসি কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ অভিষেক করেছিলেন বক্সিং ডে টেস্টে। ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার ম্যালকম মার্শাল ৩০০ টেস্ট উইকেট নিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে স্পিন জাদুকর ওয়ার্ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড করেছিলেন। ২০০৬ সালে আবার ইংলিশদের বিপক্ষে ৭০০ টেস্ট উইকেট নিয়েছিলেন।
স্থানীয় আকর্ষণ
২৬ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং উষ্ণ আবহাওয়ার সময় হয়। এই দিনে দর্শকদের খেলা দেখার প্রবণতা বেশি থাকে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) হাজার হাজার মানুষ টেস্ট ম্যাচ দেখতে আসে, যা এটিকে একটি বিশেষ ইভেন্টে পরিণত করে।
বক্সিং ডে টেস্টের জনপ্রিয়তা
বক্সিং ডে টেস্ট শুধু ক্রিকেট ভক্তদের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের কাছেও একটি বিনোদনের উৎস। ছুটির দিন হওয়ায় মানুষ পরিবার নিয়ে স্টেডিয়ামে আসে এবং টিভিতে খেলা উপভোগ করে। এটি ক্রীড়া ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংমিশ্রণ।