স্পোর্টস ডেস্ক:
ইডেন গার্ডেনে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলা দুই দলের ম্যাচ। উত্তেজনা চরমে উঠতে এই তথ্যটুকুই যথেষ্ট ছিল। টস জিতে ভারত ব্যাট করতে নেমেই দারুণ দারুণ শুরু পায়। রোহিত শর্মা রীতিমতো খুনে ব্যাটিং করতে থাকেন। তখন মনে হচ্ছিল রানবন্যার ম্যাচই হতে যাচ্ছে। ম্যাচের রোমাঞ্চ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল জন্মদিনে বিরাট কোহলির শচীনকে ছোঁয়া সেঞ্চুরি। কিন্তু হতাশ করল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারেনি ডি ককরা।
রোববার (৫ নভেম্বর) ইডেন গার্ডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪৩ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সবার ওপরে থেকে সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছে রোহিত শর্মার দল। বাকি ম্যাচগুলোয় আর কোনো দলের পক্ষেই ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির রেকর্ড ৪৯তম সেঞ্চুরিতে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২৬ রান করে। জবাবে ব্যাটিং ধসে ২৭.১ ওভারে মাত্র ৮৩ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত ২৪৩ রানের বিশল জয় পায়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে দিতে বড় অবদান রেখেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানের বিশাল হারের লজ্জা উপহার দেওয়ার পর এবার ভারতের শিকার দুর্দান্ত প্রোটিয়ারা। আগের ম্যাচগুলোয় মাত্র দুবার ৩০০ এর নিচে থামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ৮৩ রানেই থামিয়েছে ভারত।
তার আগে অবশ্য ব্যাটাররা তাদের কাজটা করে দিয়েছেন। রোহিত শর্মা দলকে ঝড়ো সূচনা এনে দেন। ২৪ বলে ৪০ রান করে সাজঘরে ফেরার পর শুভমান গিলও ২৩ রানেই থেমেছেন আজ। কিন্তু বিরাট কোহলি তো আছেনই। ইডেনে রান পেতে কিছুটা সংগ্রাম করলেও শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ১৩৪ রানের জুটি গড়ে ভারতকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন কোহলি।
দলীয় ২২৭ রানে এনগিডির শিকারে পরিণত হন আইয়ার। ৮৭ বলে ৭ চার ও ২ ছয়ে ৭৭ রান করেন তিনি। কেএল রাহুল নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ১৭ বলে ৮ রান করেই ইয়ানসেনের বলে ফন ডার ডুসেনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন। ১৪ বলে ২২ রান করে শামসির শিকারে পরিণত হন সূর্যকুমার।
সাবধানী ব্যাটিং করা কোহলি ধীরে ধীরে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। অবশেষে ৪৯তম ওভারে রাবাদার বলে ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সেই সঙ্গে ছুঁয়ে ফেলেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ২৯০তম ওয়ানডে ম্যাচে ২৭৮তম ইনিংসে ৪৯তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন তিনি। সমান সংখ্যক সেঞ্চুরির জন্য টেন্ডুলকার ৪৬৩ ম্যাচের ৪৫২ ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন।
এই বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে জন্মদিনে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মিচেল মার্শ। কোহলিও জন্মদিনেই রেকর্ড ছোঁয়া সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। দিল্লিতে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির আজও ৩৫ পূর্ণ করে ৩৬ এ পা দিলেন। উপলক্ষটা কী দারুণভাবেই না স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত কোহলি ১২১ বলে ১০ চারে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন। ইডেনের উইকেটে প্রোটিয়া বোলারদের বিপক্ষে স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং উপহার দিতে পারেননি এই ব্যাটিং মায়েস্ত্রো। শেষদিকে ১৫ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে ভারতের সংগ্রহটা বড় করেন রবীন্দ্র জাদেজা।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আজ ভিন্ন ভিন্ন পাঁচজন বোলার মিলে ভারতের পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে গিলের উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ছিলেন কেশভ মহারাজ। রাবাদাও ১০ ওভারে মাত্র ৪৮ রান দেন। ৯.৪ ওভারে ৯৪ রান দিয়ে সবচেয়ে খরুচে বোলার মার্কো ইয়ানসেন পান কেএল রাহুলের উইকেটটি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। চলতি বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরি করা কুইন্টন ডি কক মাত্র ৫ রান করে সিরাজের বলে ইনসাউড এজড হয়ে বোল্ড হয়ে যান। এরপর দলীয় ২২ রানে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা (১১), ৩৫ রানে এইডেন মার্করামের (৯) বিদায়ে বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। বাভুমাকে ফিরিয়ে শিকার শুরু করেন জাদেজা, আর মার্করামকে ফেরান শামি।
দলীয় ৪০ রানে পরপর দুই ওভারে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই বিদায় নেন হেইনরিখ ক্লাসেন (১) ও রাসি ফন ডার ডুসেন (১৩)। ক্লাসেন ও ডুসেন দুজনকেই রিভিউ নিয়ে ফেরায় ভারত।
ততক্ষণে উইকেট শিকারে মত্ত হয়ে উঠেছেন জাদেজা। ৫৯ রানের মাথায় দক্ষিণ আফ্রিকা ডেভিড মিলারকেও (১১) হারায়। জাদেজার বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। এরপর ৬৭ রানে কেশভ মহারাজকেও (&) বোল্ড করেন তিনি।
৭৯ রানে যাদবের বলে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন মার্কো ইয়ানসেন (১৪)। আর কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই রাবাদাকে (৬) নিজেই ক্যাচ ধরে ফেরান জাদেজা। সেই সঙ্গে পূরণ করেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট। এনগিডিকে বোল্ড করে প্রোটিয়াদের লেজ মুড়িয়ে দেন যাদব।
ভারতের পক্ষে ৯ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন জাদেজা। ৫.১ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকারে করেন কুলদীপ জাদব। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে শামিও ২ উইকেট শিকার করেন। বাকি উইকেটটি সিরাজের দখলে যায়।