হোম অন্যান্যসারাদেশ কোমর পানিতেই ঈদের নামাজ কয়রার দূর্গত পানিবন্দি মানুষের

কোমর পানিতেই ঈদের নামাজ কয়রার দূর্গত পানিবন্দি মানুষের

কর্তৃক
০ মন্তব্য 92 ভিউজ

খুলনা অফিস:
সুপার সাইক্রোন আম্ফানে লন্ডভন্ড খুলনার কয়রা উপজেলার পানিবন্দী মানুষ এবার কোমার পানিতেই দাড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়েছেন। আম্পানের ছোবলে নদীর বাধ ভেঙ্গে প্লাবিত এলাকার কোথাও মসজিদ, খোলা ময়দান বা স্কুল-কলেজের মাঠে কোথাও নামাজ আদায় করার মত কোন সুযোগ না থাকায় বানভাসী হাজারো মানুষ তাদের প্রধান ধর্মীয় পাবর্ন ঈদুল-ফিতর এভাবেই উদযাপন করেছে। সোমাবর কয়রা সদর ইউনিয়নের সদর, গোবরা, হরিনখোলা, ঘোটাখালিসহ স্থানীয় কয়েক গ্রামের এ ঈদের নামাজে অংশ গ্রহন করে। এ সময় মুসল্লীরা সাইক্লোণ আম্ফানে ভেঙ্গে যাওয়া বাধ সুরক্ষা ও পানিবন্দী লাখো মানুষকে বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য মোনাজাত করেন। এছাড়া বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী থেকেও মানুষকে মুক্তির জন্যও প্রার্থনা কার হয়। কোমর পানির মধ্যে এ ঈদের নামাজে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম. শফিকুল ইসলাম, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর, গন্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। কোমর পানির মধ্যেই দাড়িয়ে ইমাম সাহেব ঈদের নামাজে ইমামতি করেন। আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের ঈদের মানাজের এমন করুন ও হৃদয় বিদারক দৃশ্য এ অঞ্চলের মানুষ আগে কখনও দেখেনি। নামাজ পড়তে আসা কপোতাক্ষ, শাকাবড়িয়া নদীর ভাঙ্গনে নি:স্ব ষাটোর্দ্ধ আবুল কালাম, ভাঙ্গনে ভিটে মাটি হারানো আ: কুদ্দুসসহ অসংখ্য পানিবন্দী দূর্গত মানুষ জানান, তারা তাদের পঞ্চাশ-ষাট বছরের জীবনে এমন অবস্থায় কখনও ঈদের নামাজ আদায় করেননি। সবর্নাশা ঝড় তাদেরকে নি:স্ব করে দিয়ে গেছে। এখন পানির মধ্যেই তাদেরকে বন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষ ভেঙ্গে যাওয়া বাধ মেরামতের চেষ্টা করলেও জোয়ারের পানি আটকানো যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে পানিতে দাড়িয়েই নামাজ পড়তে হয়েছে।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়রা উপজেলার মানুষ। উপজেলার প্রায় আশি শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে। যে কারনে কোথাও মানুষের ঠাই নেওয়ার জন্য উচু বাধ বা জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সকলের সাথে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত দূর্ভোগে পড়া পানিবন্দি মানুষের সাথেই পানিতে দাড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রান চাই। দ্রুত কয়রা উপজেলা পরিবেষ্টিত চারটি নদীর বাধ স্থায়ী ও টেকসই করে নির্মানের দাবী উপজেলাবাসীর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধেই কয়রার ভেঙ্গে যাওয়া বাধ মেরামতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছেন। সেজন তাকে ধন্যবাদ জানায় উপজেলাবাসীল পক্ষ থেকে।একই সাথে দাবী জানাই কয়রা উপজেলাবাসীকে বাচাতে সেনাবিাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকসই ও কনক্রিটের বাধ নির্মান করা হোক। তবেই একমাত্র কয়রাবাসী বাচতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত ২০মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে খুলনার কয়রা উপজেলা বেশীরভাগ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আম্ফানের তান্ডবে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও লোকা, সদর ইউনিয়নের গোবরা হরিণ খোলা, গোবরা, ঘাটাখালি, ২ নং কয়রা খালের গোড়া ৩ কিলোমিটার ওয়াবদার রাস্তা সম্পূর্ণ বিলিন হয়েছে, উত্তর বেদকাশি গাজিপাড়া, কাটকাটার ভাঙন, পাথরখালির খালের ভাঙন, কাশিখালের গেট, রত্নাঘেরি,কাশিরহাটখোলা, দক্ষিণ বেদকাশি গোলাখালি, আংটিহারা,ছোট আংটিহারা বেঁড়িবাধসহ ২৫টি পয়েন্টে বেড়িবাধ ভেঙ্গে যায়। এতে উপজেলার কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নসহ অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এতে প্রয় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত বাধ মেরামত না হওয়ায় জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত গোটা এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে পানির নিচেরেয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের বসতঘরের মালামাল সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের তথ্য মতে, সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে কয়রা উপজেলায় ৪০হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রশাসন দূর্গত মানুষকে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করলেও ভাঙ্গা বাধের কারনে তাদের দূর্ভোগ কমছে না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন