আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার পর চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত এক চীনা সাংবাদিককে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আরও চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, ৪২ বছর বয়সী ঝাং ঝানকে ‘বিবাদ উস্কে দেওয়া ও গোলযোগ সৃষ্টি’র অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কারাগারে গিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
শনিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সংগঠন আরএসএফ জানিয়েছে, তখন তিনি উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক বিস্তারের প্রত্যক্ষ বিবরণ পোস্ট করেছিলেন।
রবিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি। রয়টার্স নিশ্চিত করতে পারেনি যে, এই সাংবাদিকের আইনি প্রতিনিধিত্ব ছিল কি না।
এক বিবৃতিতে আরএসএফ-এর এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার আলেক্সান্দ্রা বিয়েলাকোভস্কা বলেছেন, “তাকে বিশ্বব্যাপী একজন ‘তথ্যের নায়ক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিতভ বর্বর কারাগারের অবস্থায় আটকে রাখা উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “তার দুর্ভোগ ও নির্যাতনের অবসান ঘটাতে হবে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের জন্য এখনই বেইজিং-এর ওপর চাপ প্রয়োগ করা জরুরি, যেন তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হয়।”
ঝাংকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েক মাস ধরে হাসপাতালের ভিড় এবং জনশূন্য রাস্তাগুলোর বিবরণ—ভিডিওসহ—পোস্ট করার পর, যা সরকারি বর্ণনার চেয়ে রোগটির শুরুর দিকের আরও ভয়াবহ ছবি তুলে ধরেছিল। তখন তার আইনজীবী রেন কুয়ানিউ বলেছিলেন, ঝাং বিশ্বাস করতেন যে তিনি “নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার কারণে নির্যাতিত হচ্ছেন।”
গ্রেফতারের এক মাস পর তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেছিলেন, আদালতের নথিতে যা দেখা যায়। তার আইনজীবীরা বলেছিলেন, পুলিশ তার হাত বেঁধে জোরপূর্বক নল দিয়ে খাওয়াতো।
আরএসএফ জানিয়েছে, ঝাং ২০২৪ সালের মে মাসে মুক্তি পান, তবে তিন মাস পর আবার আটক হন। পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করে সাংহাইয়ের পুডং ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়।
শুক্রবারের সাজা ঝাংয়ের চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে রিপোর্টিংয়ের পর দেওয়া হয়েছে বলে আরএসএফ জানায়। তার সাবেক আইনজীবী রেন এক্সে পোস্ট করে বলেন, নতুন অভিযোগগুলো ঝাংয়ের বিদেশি ওয়েবসাইটে করা মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে আনা হয়েছে এবং তাকে অপরাধী গণ্য করা উচিত নয়।
চীনা কর্তৃপক্ষ কখনোই প্রকাশ্যে নির্দিষ্ট করে বলেনি, ঝাংকে কোন কাজের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
“এটি দ্বিতীয়বারের মতো ঝাং ঝানকে ভিত্তিহীন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হলো, যা তার সাংবাদিকতা কাজের কারণে প্রকাশ্য নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই নয়,” বলেছেন নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের এশিয়া-প্যাসিফিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেছেন। তার মতে, “চীনা কর্তৃপক্ষকে ঝাংয়ের নির্বিচার আটক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাকে মুক্তি দিতে হবে।”
আরএসএফ বলেছে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম সাংবাদিক কারাগার, যেখানে অন্তত ১২৪ জন সংবাদকর্মী আটক আছেন। ২০২৫ সালের বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে দেশটি ১৮০টির মধ্যে ১৭৮তম স্থানে রয়েছে।