হোম খুলনাযশোর কেশবপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত, আহত ১০

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুরে (যশোর):

যশোরের কেশবপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটে অংশ নেয়ায় স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের কর্মীরা নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মীদের হুমকি ধমকি ও মারপিট অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের নের্তৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি কেশবপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আমীর হোসেন ও জাতীয় পার্টি থেকে জিএম হাসান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলামের কাছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার পরাজিত হন। এরপর থেকে ঈগল প্রতীকের নেতা কর্মীরা নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটে অংশ নেয়া কর্মীদের ভয়ভীতি, হুমকি ধমকি ও মারপিট অব্যাহত রেখেছে।

এরই জের ধরে ভোটের দিন রাত থেকে নৌকার কর্মী আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নু, শ্রমিক লীগ নেতা মুজিবুর রহমান, আলমগীর বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদ, ছাত্রলীগ নেতা সম্রাট হোসেনসহ কমপক্ষে ১০ জনকে মারপিট করে আহত করেছে।

এছাড়া, কেশবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলামের দুই ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মুজাহিদুল ইসলাম পান্না ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আজাহারুল ইসলাম মানিক, পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল, ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি, সুফলাকাটি, বিদ্যানন্দকাটি, পাঁজিয়া, মঙ্গলকোট, হাসানপুর ও গৌরিঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মোবাইলে হুমকি দেয়া হয়েছে। যে কারণে তারা ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছেন।

বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, ভোটের দিন রাতেই তেঘরী গ্রামের ঈগল প্রতীকের নেতা আজাহারুলের নের্তৃত্বে ৭/৮ জন যুবক ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালিয়েছে এবং আমাকে পরিষদের ঢুকতে দেয়া হবে না বলেও তারা হুমকি দিচ্ছে। মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন, ঈগল প্রতীকের কর্মী সমর্থরা ১০ জানুয়ারি সকালে তার মাছের ঘের দখলের চেষ্টা করে। এসময় এলাকাবাসির বাঁধার মুখে তারা পিঁছু হটে যায়।

পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল তাকে হুমকি দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের কর্মী পৌর কাউন্সিলর জিএম কবীর হোসেন, তার পিতা দবির হোসেন, টিপু সুলতান, ইমরান কবীর, মুন্তাসির রহমান, সোহেল হাসান আইদ, আলম, পলাশ, পৌর কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু ও তার ভাই উজ্জ্বল বিশ্বাস নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মীদের মারপিট ও অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে চলেছে।

কেশবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানেরা প্রতিকারে মানববন্ধন করবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে পৌর কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু বলেন, আমার দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারাই অংশ নিয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় তারাই জড়িয়ে পড়েছে। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে প্রশাসনের কাছে আমাদের নাম বলা হচ্ছে।

অপর কাউন্সিলর ও ঈগল প্রতীকের কর্মী জিএম কবীর বলেন, নির্বাচনের পরের দিন সকালে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করে এমপির সাথে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমরা কাউকে মারপিট, হুমকি-ধমকি ও ভাংচুর করিনি। হয়রানির উদ্দেশ্যে আমাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৯০, যশোর- ৬ এর সহকারী রিটার্ণিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের নের্তৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আমার দপ্তরে এসে অভিযোগ করেছেন। কেশবপুরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা যা করনীয় তা করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন