হোম খুলনাযশোর কেশবপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবোর পোল্ডার উন্মক্তসহ টিআরএম বাস্তবায়ন দাবি

কেশবপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবোর পোল্ডার উন্মক্তসহ টিআরএম বাস্তবায়ন দাবি

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 7 ভিউজ

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর):

যশোরের কেশবপুর পৌর শহরসহ হরি, ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার ১০৪ গ্রাম প্রায় দেড়মাস ধরে জলাবদ্ধ। পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি উনয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত পোল্ডার ব্যবস্থায় প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জোয়ার-ভাটাবাহী এসব নদী এখন মৃত প্রায়। নদী রক্ষায় এমুহূর্তে হরি, ঘ্যাঁংরাইল নদী খননসহ সব নদ-নদী অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন, পোল্ডারের মধ্যে আবদ্ধ নদ-নদী উন্মুক্ত করা ও টিআরএম এলাকায় ক্ষতিপূরণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের।

জনগণের এ দাবি উপেক্ষা করে পাউবো পানি নিষ্কাশনের নামে নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করে। ভবদহ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধান তিন নদী ও তার সংযোগ খাল খনন করা হলেও ২ বছর যেতে না যেতেই তা আবারও পলিতে ভরাট হয়ে যায়। ফলে সরকারের ৫০ কোটি টাকাই গচ্চা যায়। অপরদিকে, প্রতি শুষ্ক মৌসুমে পলির হাত থেকে তিন নদী রক্ষায় হরি নদীর সংযোগস্থল আপারভদ্রার মুখে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেয়া হলেও তা ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সাগরের পলিতে আবারও নদীগুলো ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর প্রভাবে নদী অববাহিকার ১০৪ গ্রামের অর্ধলাখ মানুষকে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলাসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার ৯ ইউনিয়নের পানি নিস্কাশনের প্রধান নদী হরি। যা হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা নদীর কাশিমপুর পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার। হরি নদীর পানি শাখা নদী দেলুটি দিয়ে শিবশা নদী হয়ে সাগরে পতিত হয়। নদীর প্রবাহ বন্ধে এসব নদীর সংযোগ খালে কেশবপুরের বলধালি, গরালিয়া, বুড়–লি, পাথরা, টিপনে, চটচটিয়া, রতনখালি, সুন্দর মহল, ফুলবাড়ি, বাগআঁচড়া বিলসহ মোট ৯১টি স্লুইচ গেট দেয়া হয়। এছাড়া, খুকশিয়া ৮ ভেন্টে স্লুইচ গেটের সাথে ছোট বড় ২৭ টি বিল, নরনিয়া ৪ ভেন্টের সাথে ১০-১২টি বিল, ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের সাথে ছোট বড় ৫২টি বিল ও কোনো কোনো রেগুলেটরের সাথে একাধিক বিল যুক্ত আছে। যা পোল্ডারে আবদ্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধগ্রস্থ হচ্ছে। বর্তমান এসব স্লুইচ গেটের দু’পাশ পলিতে ভরাট হয়ে অকেজো হয়ে গেছে। পাউবোর পোল্ডার ব্যবস্থার প্রভাবে প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে হরি নদীতে যেমন কোন জোয়ার উঠে না, তেমনি কোন গেট দিয়ে পানি নদীতে পতিত হয় না। ফলে নদীগুলো বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে বন্যায় রূপ নিয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮ সালে ৩ বছর মেয়াদে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ তিন নদীসহ সংযোগ খাল খনন করা হলেও তা ২ বছরে ভরাট হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে। ফলে সরকারের ৫০ কোটি টাকাই গচ্চা গেছে। এছাড়া, প্রতি শুষ্ক মৌসুমে পলির হাত থেকে নদী রক্ষায় হরি নদীর সংযোগস্থল আপারভদ্রার মুখে গত বছর সাময়িক ক্রসবাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে হরি নদীর স্রোতের মুখে মাঝপথে বাঁধ ধসে যায়। পরে আর তা মেরামত হয়নি। ফলে সাগরের পলিতে আবারও নদীগুলো ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

কেশবপুর পৌরর মধ্যকুল এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইকবাল, শিক্ষক মদন সাহা অপু জানান, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমে তাদের তিন দফা বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। প্রথম দফার বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেলেও শেষ দুবারের বন্যার পানি নামেনি। এখনও বাড়িতে হাটু পানি।

তিন নদী মোহনার বাসিন্দা বড়েঙ্গা গ্রামের সুকুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতি শুষ্ক মৌসুমের ১৫ মাঘ থেকে নদীতে পলি আসা শুরু হয়। এজন্যে ১৫ মাঘের আগেই হরি নদীর সংযোগস্থল আপারভদ্রার কাশিমপুরে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু সময়মত অর্থ বরাদ্দ না মেলায় বিলম্বে বাঁধ দেয়া হয়। ফলে পলিতে নদী ভরাট হয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় হরি নদীতে টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া সকল পরিকল্পনাই অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাপাউবো‘র সদস্য মহির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৬০ সালের পূর্বে এই অববাহিকায় গোনে-বেগোনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি ঘন মিটার পানি সঞ্চালিত হতো। পোল্ডার ব্যবস্থার পরে তা কমে দাঁড়ায় ২ থেকে আড়াই কোটি ঘন মিটারে। পলির পরিমান ঠিক থাকলেও পানির সঞ্চালন কমে যাওয়ায় জোয়ারের প্রান্ত ভাগ থেকে পলি জমতে থাকে। একই সাথে ভূমির নি¤œগমন ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, জরুরী ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের জন্যে হরিহর ও আপারভদ্রা নদীতে তিনটি ভাসমান খননযন্ত্র নামানো হয়েছে। দুটি খননযন্ত্র দিয়ে আপারভদ্রা নদীর পলি অপসারণে কাজ চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন