জয়দেব চক্রবর্তী, কেশবপুর (যশোর):
যশোরের কেশবপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বহিরাঙ্গন আবর্জনায় ভরে থাকে। হাসপাতাল চত্বরে থাকা গভীর নলকূপটি নষ্ট। জেনারেটর থাকলেও সেটি চালু করা হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয় রোগীদের। এক বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সের চালকও নেই।
বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ লাইন। আর অন্তর্বিভাগে রোগীদের ভিড়। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মেঝে, সিঁড়ি, বারান্দায় যত্রতত্র ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। এমনকি রোগীদের বিছানার পাশেও আবর্জনা রয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডের উত্তর পাশের একটি শৌচাগারে পানি ভর্তি। শৌচাগারের দরজা খুললেই দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্যান-বাতি বন্ধ হয়ে যায়, তখন অসম্ভব কষ্ট হয়। ঝড়বৃষ্টি হলে মাঝেমধ্যে সারা রাত বিদ্যুৎ থাকে না।
আবদুল গণি , রোগী শের আলী শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, শৌচাগারের দরজা খুললেই দুর্গন্ধ বের হয়। শৌচাগার পরিষ্কার করা হয় না।
হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়া জাহানপুর গ্রামের আবদুল গণি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্যান-বাতি বন্ধ হয়ে যায়, তখন অসম্ভব কষ্ট হয়। ঝড়বৃষ্টি হলে মাঝেমধ্যে সারা রাত বিদ্যুৎ থাকে না।
কর্তব্যরত নার্সরা এ সময় বলেন, হাসপাতালের জেনারেটর আছে। কিন্তু তা চালানো হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে তাঁদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মজিবর রহমান বলেন, হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানিরও সংকট আছে। হাসপাতালের ভেতরে গভীর নলকূপটি নষ্ট। পানি আনতে হয় দূর থেকে। নয়তো পানি কিনে খেতে হয়। তাঁরা সরকারি হাসপাতালে আসেন অল্প খরচে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য। এখন যদি পানি কিনে খাওয়া লাগে, তাহলে কীভাবে হয়?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মনিরামপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও তালা উপজেলা থেকেও রোগী আসেন। গতকাল রোববার বহির্বিভাগে ৩৮০ জন ও জরুরি বিভাগে ৩৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আর অন্তর্বিভাগে ৯৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালটি কমিউনিটি ক্লিনিক সেবায় একবার দেশসেরা, স্বাস্থ্যসেবায় একবার দ্বিতীয় ও দুবার তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
মনিরামপুরের দীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, সম্প্রতি তাঁর এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই। এ বিষয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি এক বছর ধরে গ্যারেজে পড়ে আছে। কোনো গুরুতর রোগী থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার চালক অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে রোগী পৌঁছে দেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কেশবপুর থেকে খুলনায় যাওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া নেওয়া হয় ১ হাজার ২০ টাকা। সেখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া নেওয়া হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, এক বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই। তাঁর গাড়ির চালক দিয়ে জরুরি প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। জেনারেটর আছে কিন্তু তেলের বরাদ্দ না থাকায় সেটি চালানো যায় না। গভীর নলকূপটিতে এক বছর ধরে পানি উঠছে না। অন্যদিকে ছয়জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিপরীতে মাত্র দুজন কর্মরত। তাঁদের দিয়ে পুরো হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন। এসব বিষয়ে তিনি আগেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন, আবারও বলবেন।