জাতীয় ডেস্ক:
বর্তমান কৃষিকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য টেকসই ও নিরাপদ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষিখাতে নেয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে।
প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) নামের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এটি কৃষির উন্নয়নে এযাবৎকালে নেয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
বুধবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার।
এ সময় বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলকে (ইফাদ) ধন্যবাদ জানান তিনি। সেই সঙ্গে অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
পার্টনার প্রকল্পটি পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত ৬৪ জেলার ৪৯৫ উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ও ইফাদ দিচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
প্রোগামটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকা ৭টি সংস্থা তাদের নির্ধারিত কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করছে। যেখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর লিড এজেন্সির দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরও ৮টি সংস্থা এই প্রোগ্রামে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে কাজ করছে।
এই মেগা প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উত্তম কৃষিচর্চা সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে ৩ লাখ হেক্টর ফল ও সবজি আবাদি জমি বৃদ্ধি; জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল উচ্চফলনশীল নতুন ধানের ও ধান ছাড়া অন্যান্য দানাদার ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ মোট ৪ লাখ আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানো; উন্নত ও দক্ষ সেচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ১ লাখ হেক্টর নতুন আবাদি জমি সেচের আওতায় আনা; স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশব্যাপী ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ৩২১টি কৃষক পরিবারকে ‘কৃষক স্মার্ট কার্ড’ দেয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষিসেবার সম্প্রসারণ।
এ ছাড়া ই-ভাউচারে ভর্তুকি দেয়া হবে এবং কৃষকদের জন্য তৈরি হবে কৃষক ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম। মোবাইল প্ল্যান্ট ক্লিনিকের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ সেবাকে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ড্রিপ, স্প্রিংকলার, এডব্লিউডি ও ভূগর্ভস্থ সেচ নালাসহ সৌরশক্তি ব্যবহার করে সেচের পানি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে পানির অপচয় হ্রাস করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলা হয়, প্রকল্পটি দেশের কৃষির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দেশের কৃষি খাতের বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরে জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮-এর কর্মপরিকল্পনা (২০২০) ও উত্তম কৃষিচর্চা নীতিমালা ২০১০ বাস্তবায়নসহ এসডিজি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ডেলটা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ প্রকল্পের কার্যক্রমের মাধ্যমে এ দেশের কৃষক, কৃষিসেবা, কৃষি সমাজ এবং কৃষি ব্যবসা সর্বোপরি বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।