জাতীয় ডেস্ক:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি বিদ্যালয়ের ছাদে উঠে ধুমপান করার অভিযোগে পাঁচ ছাত্রীকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। শিক্ষকরা ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করে তা অভিভাবকদের মধ্যে ও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়ায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী মনের কষ্টে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
পরে মৃত ছাত্রী জিনিয়া খাতুনের জানাজায় গিয়ে গণপিটুনি ও হামলার শিকার হয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ।
সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রী স্কুলের ছাদে ধূমপান করছিল। সেখানে জিনিয়াও ছিল। সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মসিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন। পরে ছাত্রীদের ডেকে মারধর করে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। সেই সঙ্গে টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়াসহ অভিভাবকদের জানানোর ভয় দেখান। অভিমানে বিদ্যালয় ছুটির পর জিনিয়া বাড়িতে এসে নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
এ ঘটনায় বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে মৃতের পরিবার ও শিক্ষকরা। জিনিয়ার স্বজনরা অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আর শিক্ষকরা হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা করেছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মৃত ছাত্রীর মা, মামি ও স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সেসময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সান্ত্বনা দিয়ে ফিরিয়ে দেন। এ সময় ‘জিনিয়া হত্যার বিচার চাই, আমাদের মেয়ে মরল কেন? বিচার চাই’ লেখা ফেস্টুন ছিল বিক্ষোভকারীদের হাতে।
মৃত ছাত্রীর মা শান্তা খাতুন বলেন, স্যারেরা তার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। তিনি বিদ্যালয়ে মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে এসেছেন। জড়িতদের সঠিক বিচারের আশায় তিনি থানায় মামলা করবেন।
মামি মমতাজ খাতুন বলেন, তাদের মেয়ে সিগারেট খায়নি। তবুও তাকে স্যাররা দুই ঘণ্টা রুমে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। স্যারের পা ধরেও বাঁচতে পারল না জিনিয়া। তিনি দোষীদের শাস্তি চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলে, ‘সে ঘটনাস্থলে ছিল। সে ও তার বান্ধবী জিনিয়া সিগারেট খায়নি। তবুও লাল্টু স্যার বারবার জিনিয়াকে বলছিল ‘তোর ঠোঁট কালো, তুই সিগারেট খাইছিস, তোকে নায়িকা বানাবো, বিড়ি খাওয়া ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেব।’ আর ওলিদ স্যার ভিডিও করেছে।’
অপরদিকে, প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি চেয়ে বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। সমাবেশের আয়োজন করে জেলা শিক্ষক সমিতি। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল ইসলাম স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান, অতিরিক্ত সদস্য আব্দুর রহিমসহ প্রমুখ।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, আত্মহত্যার ঘটনায় তিনি মর্মাহত। বিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে প্রধান করে তিনি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তারা ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তার ভাষ্য, আত্মহত্যার ঘটনায় কোনো শিক্ষক জড়িত থাকলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পড়েনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
